বাংলার খবর
সাঁওতালি ভাষায় সংবিধান অনুবাদ করলেন বাঁকুড়ার যুবক, প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: নিজের মাতৃভাষায় সংবিধান অনুবাদ এবং লিখে নজির গড়লেন আদিবাসী যুবক। ভারতীয় সংবিধান সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করে এবং অলচিকি হরফে লিখে অসাধ্য সাধন করলেন বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের প্রত্যন্ত মুড়াগ্রামের বাসিন্দা বছর বত্রিশের শ্রীপতি টুডু। তিনি পুরুলিয়ার সিধু কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ছোটবেলা থেকেই আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল। ভারতীয় সংবিধানে আদিবাসীদের নিয়ে কী লেখা আছে, তা জানতেই সংবিধান পড়া শুরু করেন শ্রীপতি। সেখান থেকেই তাঁর মাথায় আসে নিজের ভাষায়, নিজের হরফে তিনি সংবিধান অনুবাদ ও রচনা করে নিজের জনজাতির কাছে পৌঁছে দেবেন।
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। লকডাউনে যখন গোটা বিশ্ব গৃহবন্দী, তখন গৃহবন্দী সময়টাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সংবিধান অনুবাদে মন দেন শ্রীপতি। আর তাঁর এই কীর্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শ্রীপ্রতির এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। গত ২৯ মে ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে শ্রীপতির সাঁওতালি ভাষার সংবিধান অনুবাদ করার কথা উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে শ্রীপতি টুডুর এই কাজকে কুর্নিশ জানান।
‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভারতে বিভিন্ন ভাষা ও উপভাষা রয়েছে। দেশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এই ভাষার বৈচিত্র্যকে মজবুত করার জন্য কাজ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে উদাহারণ দিতে গিয়ে শ্রীপতি টুডুর নাম করেছিলেন। তাঁর এই কাজ যে আগামী প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, সেই কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বাঁকুড়ার মুড়াগ্রামের বাসিন্দা শ্রীপতি কৃষক পরিবারের সন্তান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট তিনিই। গ্রামের স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ঝিলিমিলি হাই স্কুল থেকে সাঁওতালি মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্ম্মু মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পুরুলিয়ার একটি স্কুল ও ঝাড়গ্রামের একটি কলেজে শিক্ষকতাও করেন তিনি। শ্রীপতি বর্তমানে সিধু কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালি ভাষা বিভাগের অধ্যাপক। এবং ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড রিসার্চ সংস্থার সঙ্গেও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবিধানে মোট ২৪টি ভাগের ৪৪৮টি ধারা, ১২টি তফসিল এবং ১১৩টি সংশোধনী রয়েছে। কিন্তু শ্রীপতির সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদিত সংবিধান সমস্ত বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে ছুঁয়ে গেলেও কিছুটা সংক্ষিপ্ত। এই বছরই দিল্লির একটি প্রকাশনা সংস্থা তাঁর এই সাঁওতালি ভাষায় এবং অলচিকি হরফে লেখা ভারতীয় সংবিধানটি প্রকাশ করেছে। গোটা আদিবাসী সমাজ শ্রীপতির এই কর্মকাণ্ডে উচ্ছ্বসিত। শুধু সংবিধান রচনাই নয়, অধ্যাপিকা সোনালী মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য নিয়ে ইতিমধ্যেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৬৫ কবিতা সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেছেন শ্রীপতি টুডু।