বাংলার খবর
জলপাইগুড়ির জোড়া দেবী চৌধুরাণী মন্দিরের পুজো আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : জলপাইগুড়ি জেলার পুরোনো পুজোগুলোর একটি হল জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ৩১ নং জাতীয় সড়কের পাশে গোশালা মোড়ের পুজো। অনেকের দাবি এটি দেবী চৌধুরাণী মন্দির। পুজোর ইতিহাসের ব্যাপারে জানা যায়, এখানকার পুজো প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো। এখানে ৪০০ বছরের পুরোনো একটি বট গাছও রয়েছে।
১৮৯০ সাল নাগাদ নয়ানকাপালিক এক সাধক এখানে ছিলেন। যিনি পাশ্ববর্তী পাতকাটা কলোনীর বাসিন্দা পাতু দাসকে এনে এখানে নরবলি দিয়েছিলেন। এমনকি এই কাজের জন্য ব্রিটিশ শাসনের সময় তাঁর ফাঁসি হয়। জলপাইগুড়ি জেলখানায় তাঁর রেকর্ড আজও রয়েছে। দেবী চৌধুরাণীর গড় বা ডেরা বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। দেবী চৌধুরাণী লুঠ করে নিয়ে আসা সম্পত্তি তাঁর এইসব গোপন ডেরায় গরীবদের হাতে তুলে দিতেন। সবার জানা যে, জেলার পুরোনো এবং ঐতিহাসিক মন্দির হলো দেবী চৌধুরাণী মন্দির। ইতিহাস এবং কিংবদন্তি মিলেমিশে একাকার এখানে। তার উপর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠ-এ ভবানী পাঠক এবং দেবী চৌধুরাণীর যে উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় মানুষরা মনে করেন এই দেবী চৌধুরাণী, সেই দেবী চৌধুরাণীই।
এমনকী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্ৰহশালায় একটি বজরা সংরক্ষণ করা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সেটি দেবী চৌধুরাণীর বজরা। যদিও তা নিয়ে এখনও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি গবেষকরা। তবু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! ভবানী পাঠক আর দেবী চৌধুরাণী- বাঙালির কাছে এই দুই চরিত্র ইতিহাসের চেয়েও বেশি। লেখনীর গুনে জীবন্ত হয়ে ওঠা দুটি চরিত্র। কয়েকশো বছর ধরেই বাঙালির মনে গেঁথে রয়েছে। বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দমঠ এর চরিত্র হওয়ার কারণে মানুষের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
পড়তে পড়তে কখন সত্যি-মিথ্যা, কিংবদন্তি, আসল-নকল মিলেমিশে এক হয়ে কালোত্তীর্ণ হয়ে যায়, তা সাধারণ বোধের বাইরে চলে যায়। তাঁদের নামে যখন মন্দির, তখন তার সঙ্গে যে কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা মিথ জড়িয়ে থাকবে তাতে আশ্চর্য কি? অপরদিকে জলপাইগুড়ি জেলারই রাজগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত শিকারপুর চা বাগান ঘেরা এলাকায় রয়েছে আরকটি মন্দির। যেটাকেও স্থানীয় বাসিন্দারা দেবী চৌধুরাণী মন্দির বলে দাবি করেন। এমনকী এখানে মন্দিরে ঢুকতেই দু’টি বিগ্ৰহ দেখা যায়। যে দু’টো বিগ্ৰহ দেবী চৌধুরাণী ও ভবানী পাঠকের বলে দাবি স্থানীয়দের। এখানেও পর্যটকরা আসেন সারা বছর।
এই মন্দিরের কালীপুজোও জাগ্রত। এখানকার কালীপুজোর আলাদা আস্বাদ রয়েছে। যেটা এখনও সম্পূর্ণ চলে যায়নি। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাতে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সারারাত জেগে এই পুজো দেখে আসে। পুজো দেখাও হয় পাশাপাশি কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারও। কিন্তু গত ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এই কাঠের তৈরি মন্দির। যারফলে হারিয়ে যায় অনেক ইতিহাস। তবে আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায় বিগ্ৰহ দু’টি। যে দু’টি বিগ্ৰহকে বলা হয় দেবী চৌধুরাণী ও ভবানী পাঠকের বিগ্ৰহ। এখানে বর্তমানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে।