আন্তর্জাতিক
বাহান্নতেই থেমে গেল লেগ স্পিনের জাদুকরের ঘূর্ণি! হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত শেন ওয়ার্ন

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : বিশ্বক্রিকেটে জোড়া নক্ষত্রপতন। শুক্রবারের সকালটা শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইকেট কিপার রডনি মার্শের প্রয়াণের খবর দিয়ে। সন্ধে নামতেই আরও একটি দুঃসংবাদ ক্রিকেটদুনিয়াকে বিধ্বস্ত করে দেবে কল্পনাও করা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন আর নেই। আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন প্রাক্তন অজি তারকা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। কিংবদন্তি এই অজি লেগস্পিনারের মৃত্যুতে স্তম্ভিত এবং শোকোস্তব্ধ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।
থাইল্যান্ডের কো সামুইয়ে নিজের বাংলোতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ওয়ার্নের ম্যানেজমেন্টের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ওয়ার্নকে তাঁর বাড়িতেই অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। সাড়া দিচ্ছিলেন না ওয়ার্ন। চিকিৎসকদের মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পরিবার এই সময়ে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করছে।’ অথচ মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও রড মার্শের প্রয়াণ নিয়ে টুইট করেছিলেন ওয়ার্ন। টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘রড মার্শের প্রয়াণের খবরটা শুনে খুবই খারা লাগছে। উনি ক্রিকেটের কিংবদন্তি ছিলেন এবং বহু তরুণ-তরুণী ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা ছিলেন। রড ক্রিকেটকে খুবই যত্ন করতেন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের অনেক কিছু দিয়েছেন। রশ ও তাঁর পরিবারকে অনেক অনেক ভালোবাসা। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করি বন্ধু।’ যে মানুষটা পূর্বসূরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁকে নিয়েও যে গোটা বিশ্ব শোক প্রকাশ করবে, তা স্পিনের জাদুকরও বুঝতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি প্রাক্তন অফ স্পিনার মুথাইয়া মুরালিধরনের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন ওয়ার্ন। ১৯৬৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়ার ফার্নট্রি তে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব ক্রিকেটে লেগ স্পিনের শেষ সম্রাট। ১৯৯২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ওয়ার্নের। একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। শেষ টেস্ট ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। শেষ একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০৫ সালে এশিয়া একাদশের বিরুদ্ধে। এই ১২-১৩ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে গোটা বিশ্বের স্পিনের সম্রাট এবং যাদুকর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শুধু লেগ স্পিনে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের রিস্ট স্পিনের শেষ সম্রাটও বলা যায় তাঁকে। একমাত্র ভারতীয়রা ছাড়া তাঁর স্পিনের ঘূর্ণিতে নাকানিচোবানি খেয়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানরা।
মাইক ব্যাটিংকে বোল্ড করার সেই ডেলিভারি শতাব্দীর সেরা বলের তকমা পেয়েছে। ২২ গজে শচীন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তাঁর ডুয়েল বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম উপভোগ্য বিষয় ছিল। ১৪৫ টেস্টে নিয়েছেন ৭০৭ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৩৭ বার। ১০ উইকেট ১০ বার। সেরা বোলিং ৭১ রান দিয়ে আট উইকেট। ১৯৪ একদিনের ম্যাচে নিয়েছেন ২৯৩ উইকেট। সেরা বোলিং ৩৩ রানে ৫ উইকেট। বোলিঙের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন ওয়ার্ন। টেস্টে করেছেন ৩ হাজার ১৫৪ রান। এক ডজন অর্ধশতরানও রয়েছে। কোনও শতরান ছাড়াই টেস্টে সর্বাধিক রান করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর নামের পাশে। ওয়ানডেতে একটি অর্ধশতরান সহ করেছেন এক হাজার ১৮ রান। প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক ছিলেন। তারপর আইপিএলে রাজস্থান সহ একাধিক টিমের মেন্টর হিসেবেও কাজ করতে দেখা গিয়েছে শেন ওয়ার্নকে।
বর্ণময় এই ক্রিকেট কেরিয়ারে গড়েছেন একাধিক নজির ও রেকর্ড। টেস্টে সবথেকে বেশিবার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ (১৭), এক ক্রীড়া বর্ষে সবথেকে বেশি উইকেট (৯৬), সবথেকে বেশিবার ১০ উইকেট (১০), সবথেকে বেশি বল করার (৪০ হাজার ৭০৫) রেকর্ড রয়েছে কিংবদন্তি এই লেগ স্পিনারেরই। মাঠের বাইরেও শেন ওয়ার্ন ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র। বিতর্কেও জড়িয়েছেন বহুবার। ড্রেসিং রুমে বসে ধূমপান করা বা তাঁর সেক্সটেপ গোটা বিশ্বে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। কিন্তু তাঁর খ্যাতিতে কোনরকম আঁচড় কাটতে পারেনি সেই বিতর্কগুলো। অবশেষে ৫২ তেই থেমে গেল স্পিন সম্রাটের ঘূর্ণি।