সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, অভিষেক-রুজিরাকে কলকাতাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করুক ইডি

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কয়লা পাচার মামলায় অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক ও রুজিরাকে কলকাতাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করুক এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মঙ্গলবার এমনই নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এও জানিয়ে দিয়েছে, কলকাতা জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইডি-কে যেন সব রকম ভাবে সহায়তা করে পুলিশ প্রশাসন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনও রকম বাধা-বিপত্তি মেনে নেওয়া হবে না। যদি কলকাতায় ইডির জিজ্ঞাসাবাস চলাকালীন অভিষেকদের নিরাপত্তা কোনও ভাবে বিঘ্নিত হয়, তার জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এও জানিয়ে দিয়েছে, অভিষেক এবং রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ২৪ ঘণ্টা আগে নোটিশ পাঠাতে হবে ইডি-কে।

কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতায় জেরা করলে ঘেরাও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টে ইডি-এর তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বিচারপতিদের সামনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে।

কয়লা ও গরু পাচার মামলায় ইডি তাঁদের কলকাতায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করুক, এই দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন অভিষেক ও রুজিরা। তাঁদের হয়ে সুপ্রিমকোর্টে সওয়াল করেন কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভি। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট তাঁদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতায় জেরা করা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ইডি-এর আইনজীবী। এই প্রসঙ্গে নারদ মামলায় সিবিআই আধিকারিকদের নিজাম প্যালেসে ঘেরাওয়ের প্রসঙ্গ তুলে আনেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। গত বছর মে মাসে নারদ মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম প্যালেসের দফতরে এনেছিল সিবিআই। সে সময় দিনভর উত্তেজিত জনতা নিজাম প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। শেষে মধ্যরাতে চার নেতাকে নিজাম প্যালেস থেকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টে সেই প্রসঙ্গ তুলে গত বৃহস্পতিবার ইডি-র আইনজীবীরা বেলন, ‘অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় সিবিআই অফিসারদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্তরা খুবই প্রভাবশালী।’

এই আশঙ্কার কথা বলে ইডি-এর আইনজীবী আদালতের কাছে আবেদন করেন, কলকাতা পুলিশ যেন তাদের যথাযথ সহযোগিতা করে, এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। তাহলে দু’জনকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে কোন অসুবিধা নেই বলে জানান অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল। সুপ্রিম কোর্ট বলে, কলকাতা পুলিশ এনফোর্সমেন্টকে যথাযথ সাহায্য যাতে করে সেই নির্দেশ দেয়া হবে। মঙ্গলবার সেই নির্দেশই দিল সুপ্রিম কোর্ট।

কয়লা পাচার মামলায় এখনও পর্যন্ত অভিষেককে দিল্লির দফতরে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। কিন্তু রুজিরা এখনও এক বারও হাজিরা দেননি। শেষ গত ২১ এবং ২২ মার্চ অভিষেক ও রুজিরাকে দিল্লির ইডির দফতরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছিল। তার আগেই দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিষেক-রুজিরা। এখনও পর্যন্ত হাজিরা না দেওয়ায় গত শনিবার রুজিরার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য পরোয়ানা জারি করে দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। আগামী ২০ অগস্টের মধ্যে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।