বাংলার খবর
শিল্প ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শুরু হল ষষ্ঠ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন,রাজ্যে বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : নিউটাউনে বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে আজ থেকে শুরু হল ষষ্ঠ বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। সরকারি সূত্রে এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে এবারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ১৯টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন। গত দু’বছর করোনার কারণে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। অতিমারির কারণে গোটা বিশ্ব সহ দেশেরও অর্থনীতি প্রবলভাবে ধাক্কা খেয়েছে। যদিও তার মধ্যেও গত আর্থিক বছরে রাজ্যের অর্থনীতির গ্রোথ ছিল ১.২ শতাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রাজ্যকে নতুন দিশা দেখিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এবারের এই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেশ-বিদেশের প্রথমসারির শিল্পপতিরা প্রথম থেকেই রাজ্যে মোটা অংকের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কোভিড পরবর্তী সময়ে এবারের বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সরকারি সূত্র অনুযায়ী গত ৫ বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পর্যটন, পরিকাঠামো, কৃষি, এমএসএমই, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি এবং খনি শিল্পে বড় বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবারের সম্মেলনে ১৯টি দেশের আড়াইশো জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। এরমধ্যে জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকা, ইতালি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, ব্রিটেন, কেনিয়া নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডের মতো দেশের প্রতিনিধি এবং প্রথম সারির শিল্পপতিরা রয়েছেন। এছাড়াও দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা উপস্থিত রয়েছেন এবারের সম্মেলনে।
আরও পড়ুন – আন্তর্জাতিক ট্রাক পরিবহনের করকাঠামোর সরলীকরণ, নয়াচর-সিলিকন ভ্যালি নিয়ে বড় ঘোষণা সরকারের
জেএসডব্লু গ্রুপের চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দাল, রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি, আরপিজি গ্রুপের সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, ফরচুন গ্রুপের কিশোর বিয়ানি, উইপ্রোর চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি, ভারতি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের রাজন ভারতি মিত্তাল, গ্রেটইস্টার্ন এনার্জি কর্পোরেশন লিমিটেডের ওয়াই কে মোদি, ভারত হোটেলস লিমিটেডের এমডি জ্যোৎস্না সূরি, ডালমিয়া ভারত গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পুনিত ডালমিয়া, আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াইসি দেবেশ্বর, চ্যাটার্জী গ্রুপের চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চ্যাটার্জী, বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়, এসবিআই চেয়ারম্যান দীনেশ খারা সহ দেশের অন্যান্য প্রথম সারির শিল্পপতিরা যোগ দিয়েছেন এবারের সম্মেলনে। সর্ববৃহৎ প্রায় ৪৯ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে এবারের সম্মেলনে হাজির থাকছে বৃটেন। কলকাতার ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার নিক লো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কলকাতাতেই শুধু মাত্র ৩০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে চলেছে ব্রিটিশ সংস্থাগুলি। এবারের সম্মেলনে সবথেকে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে দেউচা পাচামি এবং তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর করতে ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ। সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম আদানি নিজে এসে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই নিয়ে বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন – কলকাতা পুলিশে চালু হচ্ছে নেতাজি ব্যাটেলিয়ন, ১ হাজার ১৭১ জনকে নিয়োগ
আজ অর্থাত বুধবার সম্মেলন শুরুর আগে গৌতম আদানি এবং উইপ্রোর চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজির সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এছাড়াও এবারের সম্মেলনে আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আসতে চলেছে। তারমধ্যে হাওড়ার বেলুড়ে ১০০ একর জমিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে অত্যাধুনিক লজিস্টিক হাব গড়তে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। আগে যেখানে নিসকোর কারখানা ছিল সেই জমিতে গড়ে উঠবে এই শিল্প। খনি ক্ষেত্রে বৃহৎ যন্ত্র তৈরির নামজাদা সংস্থা গেইনওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পানাগড়ে ৩৫ একর জমিতে তৈরি করবে ভারী শিল্প। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাস থেকে শুরু হবে উৎপাদন। প্রাথমিকভাবে ৩৫০ জনের কর্মসংস্থান হবে। আদিত্য বিড়লা গ্রুপ রাজ্যে রঙের কারখানা তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে কারখানা ও অনুসারী শিল্প গড়তে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী ৮০ একর জমিতে শিল্প গড়বে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। হাওড়ার আমতায় গড়ে উঠছে অন্যতম বড় সর্বাধুনিক লজিস্টিক হাব। ৪০ লক্ষ বর্গ ফুটের এই বিশাল হাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো ইকোমার্স সংস্থাগুলো। ফলে রাজ্যে প্রচুর বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর এবারের সম্মেলনেরও অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান।
আরও পড়ুন – মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন না প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য সম্মেলনে আসছেন না নরেন্দ্র মোদি