দেশের খবর
ময়নাগুড়িতে রেল দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর, খোঁজ নিলেন প্রধানমন্ত্রী

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেই বৈঠক চলাকালীনই দুর্ঘটনার খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি আধিকারিকদের থেকে গোটা বিষয়টির খোঁজ নেন মমতা। দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, ‘ময়নাগুড়িতে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। রাজ্য সরকারের সমস্ত সিনিয়র অফিসাররা, ডিএম, এসপি, আইজি নর্থবেঙ্গল উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে তদারকি করছেন। আহতদের যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য হেডকোয়ার্টার থেকে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।’ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির দোমহনিতে ১৫৬৩৩ আপ বিকানের-পাটনা গুয়াহাটি-এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
৫ থেকে ৬ টি কামরা লাইনের পাশে নিচু জমিতে পাল্টি খেয়ে পড়ে যায়। একটির উপর আরেকটি কামরায উঠে যায়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগান স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় রেল এবং স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিক এবং উদ্ধারকারী দল। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে কামরার ভিতর থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজ চলছে। অন্ধকার নেমে আসায় জেনারেটর লাগিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রেলের একটি উদ্ধারকারী দল। ৫১টি অ্যাম্বুলেন্সকে উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি ছিল ৪০ কিলোমিটার। দুর্ঘটনায় ১২টি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতটি কামরা।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বেসরকারি সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত আহত অবস্থায় ৪০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে পাঠানো হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে এবং ১৬ জনকে পাঠানো হয়েছে ময়নাগুড়ি সদর হাসপাতালে। ময়নাগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি যাত্রীদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। যেহেতু এখনও উদ্ধারকার্য চলছে, তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সেই কারণে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরিকালীন নির্দেশে জেলার সমস্ত চিকিৎসক, নার্সদের ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
সরকারি ছাড়াও জেলার সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির ওপরই নবান্ন থেকে নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রেলের পক্ষ থেকে আহতদের পরিবারপিছু এক লক্ষ টাকা এবং নিহতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকালই দুর্ঘটনাস্থলে আসছেন রেলমন্ত্রী। ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য রেলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে।
সেগুলো হল- ৮১৩৪০৫৪৯৯৯, ০৩৬১২৭৩১৬২২/২৩, ০৩৫৬৪২৫৫১৯০। জলপাইগুড়ি কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ৯০০২০৪১৯৫১/৫৫। হাওড়া স্টেশনের হেল্পলাইন নম্বর- ০৩৩-২৬৪০২২৪১/৪২/৪৩ এবং, ২৬৪১৩৬৬০। মালদার হেল্পলাইন নম্বর- ৭২২২৮/৯, ০৩৫১২২৬৬০০০, ০৩৫১২২৮৩৪৪৪। এই ঘটনার জন্য বৃহস্পতিবার ১৩১৪৭ আপ শিয়ালদহ-বামনহাট উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ ছোট করা হয়েছে। ট্রেনটি যাবে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার ১৩১৪৮ ডাউন বামনহাট-শিয়ালদা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস বামনহাটে পরিবর্তে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে বলে পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।