বাংলার খবর
ধুনোর গন্ধে ঢোল, কাঁসর বাজিয়ে সাপ খেলা দেখিয়ে ঝাড়গ্রামে আজও পালিত হয় ঝাঁপান উৎসব

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ধুনোর গন্ধ ছড়িয়ে ঢোল, চেরপেটি, কাঁসর বাজিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে বিষধর সাপের খেলা দেখিয়ে পালিত হল ঝাঁপান উৎসব। ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইলের আঁন্ধারী অঞ্চলের বৈঞ্চা গ্রামে। গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী ডুলুং। তার জলে ভরা ঘট মাথায় নিয়ে এগিয়ে চলেছে শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রার পিছনে চলমান ভ্যান রিক্সার ওপর উঁচু মাচায় বসে কয়েকজন লোক বিষাক্ত সাপ গায়ে জড়িয়ে নানান কসরৎ দেখাতে দেখাতে এগিয়ে চলেছে বৈঞ্চা গ্রামের দিকে। এভাবেই প্রাচীন রীতিমেনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি ঝাঁপান উৎসব পালিত হল জঙ্গল মহলে। ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইলের আঁন্ধারীর বৈঞ্চাতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামে। ভোলগ্রাম, আঁন্ধারী থেকে আসা তিনটি সাপুড়ে দলের নানা ধরনের বিষাক্ত গোখরোর লিকলিকিয়ে ফনা তুলে মুখ দোলানো, কখনও সাপুড়ের মাথা, হাত থেকে উঁচুতে উঠে হিসহিসিয়ে ওঠা আমজনতার নজর কেড়েছে। বৈঞ্চা গ্রামে মনসা পুজো উপলক্ষে আশ্বিন মাসের ডাক সংক্রান্তিতে বিষধর সাপেদের নিয়ে হয় ঝাঁপান উৎসব। কিন্তু এবার ঘুর্ণিঝড়ের কারণে কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়া হয় ঝাঁপান।
সেই উৎসব এবার হল ডুলুংয়ের তীরে। সাপুড়ে দিলীপ ঘোড়াই, নুপুর দিগাররা জানান, পুরানো রীতি মেনে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই সাপের খেলা এখনও দেখান। তাঁরা অনেক ছোট বয়সে বাড়ির বড়দের কাছ থেকে এই সাপ খেলা শিখেছেন। প্রায় শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে ‘ঝাঁপান’ উৎসব হয়ে আসছে এই এলাকায়। মাঝে গ্রামের আর্থিক দুরাবস্থার জন্য কয়েক বছর বন্ধ ছিল ‘ঝাঁপান’ উৎসব। পুরানো রীতি মেনে পুজোর ঘট ডুলুং নদী থেকে আনা হয়। গ্রামের মানুষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার লম্বা লাইনের পিছনের ভ্যান রিকশায়। গ্রামের মানুষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার লম্বা লাইনের পিছনের ভ্যান রিকশায় থাকে সাপ আর সাপুড়ে।
ভ্যানের ওপরের ঝাঁপি খুলে একে একে তাঁরা বের করে আনেন বিভিন্ন ধরনের সাপ। সন্ধের আধো অন্ধকারে ডুলং নদী থেকে বৈঞ্চা গ্রামের মনসা মন্দির পর্যন্ত রাস্তায় সাপ নিয়ে এই ‘মিছিল’ দেখতে এদিন ভিড় করেছিলেন আশেপাশের গ্রামের মানুষ জন। সাপুড়ের হাতে কিলবিল করছিল সাপ। আর দর্শকেরা দূর থেকে দেখে আনন্দে মেতে উঠছিলেন। ঝাড়গ্রামের আন্ধারী, ভোলগ্রাম থেকে প্রায় জনা ৪ সাপুড়ে ১৫ টি সাপ নিয়ে বিকেলেই সাঁকরাইলের বৈঞ্চা গ্রামে পৌঁছে যান। প্রতিবারই মনসা পুজো উপলক্ষে এই ঝাঁপান উৎসব হয়। পুজোর দিন থেকে শুরু হয়ে দু’দিন ধরে চলে স্থানীয় ঐতিহ্য আর লোকসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পুজো আরাধনা।