বাংলার খবর
জিটিএ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই দার্জিলিং যাচ্ছেন রাজ্যপাল
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শুক্রবারই জিটিএ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আগামী ২৬ জুন জিটিএ নির্বাচন হবে। ১০ বছর পর আবার জিটিএ নির্বাচন হতে চলেছে। এরইমধ্যেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর আগামী ২৯ মে দার্জিলিং যাচ্ছেন। রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ থেকে ২০ দিন সেখানে তিনি থাকবেন। জিটিএ নির্বাচনের আবহে রাজ্যপালের হঠাৎ করে এই দার্জিলিং যাত্রা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এখনই জিটিএ নির্বাচন না চেয়ে গত বুধবার থেকেই অনশনে বসেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং। তাঁর দাবি, যতক্ষণ না পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে এবং পাহাড়ের ১১টি গোর্খা জনগোষ্ঠীকে যতক্ষণ না তপশিলি জাতির তকমা দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ জিটিএ নির্বাচন করা যাবে না। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিজিপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে কথাও বলেছেন গুরুং। তাই দ্রুত পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন সেরে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই রাজ্যপালের দার্জিলিং সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জিটিএ কে রাজ্যের পাশাপাশি আথিক সাহায্য করে কেন্দ্রীয় সরকারও। এর আগে বহুবার জিটিএ-এর আর্থিক তছরুপ নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। জিটিএ কেন হিসেব দিচ্ছে না, রাজ্য সরকারই বা কেন জিটিএ-এর থেকে হিসাব চাইছে না, তাই নিয়েও একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সিএজি (ক্যাগ) কে দিয়ে জিটিএ তে অডিট করানোরও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই কথায় কর্ণপাত না করে গত মার্চে রাজ্যের পুর ভোটের ফল প্রকাশের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিটিএ নির্বাচনের করার কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র দফতর সেইমতো রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিল। এরপর গত মাসেই পাহাড় সফরে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই দ্রুত জিটিএ নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই শুক্রবার জিটিএ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে আবারও রাজ্যপালের দার্জিলিং সফর বিষয়টিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। কিছুদিন আগেই তিনি গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটিয়ে দার্জিলিং থেকে ফিরেছেন। তাই অনেকেই মনে করছেন, জিটিএ নির্বাচন নিয়ে পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতির জল মাপতেই আবারও দার্জিলিং যাচ্ছেন রাজ্যপাল।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলকে ভেঙে জিটিএ তৈরি করে রাজ্য সরকার। বিমল গুরুং, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরই তৈরি হয় ৪৫ আসন বিশিষ্ট জিটিএ। জিটিএ-এর শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ জুলাই। ২০১৭ সালে দার্জিলিংকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের নামে বিমল গুরুঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই নিয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকায় বিমল গুরুংকে সরিয়ে জিটিএ-এর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিনয় তামাংকে। ২০১৯ সালে বিনয় তামাং নির্বাচনে দাঁড়ালে তিনি জিটিএ-এর পদ ছেড়ে দেন। তারপর কিছুদিন দায়িত্ব সমলান অনিল থাপা। তারপর জিটিএ-এর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিই প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। রাজ্যপালের দার্জিলিং যাত্রায় জিটিএ নির্বাচন নিয়ে পাহাড়ের উত্তাপ যে আরও বাড়তে চলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।