বাংলার খবর
রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে মিনিটখানেকের সাক্ষাতে বাক্য বিনিময় হল না রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যপালের বিস্ফোরক অভিযোগের রেস পড়ল বুধবার রেড রোডে রাজ্য সরকার আয়োজিত ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বিধানসভায় বিআর আম্বেদকরের মূর্তি মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্পিকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।
রাজ্যে গণতন্ত্র নেই, শাসকের আইন চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাজভবনে ফাইল সই করা হচ্ছে না বা বিল আটকে রাখা হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা বলেও দাবি করেছেন রাজ্যপাল। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক ভাষায় রাজ্যপালকে চিঠি লেখার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তাই আজ রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের দিকে নজর ছিল সকলেরই। প্রথা মেনে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং স্পিকার। কিন্তু কারও সঙ্গেই কারও কথা হল না। আগের দিনের ঘটনার স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা গেলে এদিনের অনুষ্ঠানে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর নিজে থেকেই কথা বলতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু আগাগোড়া মুখ ফিরিয়েই রইলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে প্রণাম করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দিকে না তাকিয়েই মাথা নিচু করেই প্রণাম সারলেন। মিনিটখানেকের সাক্ষাতে দু’জনের শরীরী ভাষাতেই ধরা পড়েছে মঙ্গলবারের ঘটনার প্রভাব। আচার মেনে একসঙ্গে ছবি তোলার সময়ও রাজ্যপালের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যপালকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সামান্য সময়ের জন্য হলেও কথা বলতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তার কোনও উত্তর দিয়েছেন কিনা, তা অবশ্য বোঝা যায়নি। কারণ করোনাকালে সকলেরই মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিল। মিনিট খানেকের সাক্ষাতের শেষেই রাজ্যপাল অবশ্য তাঁর জন্য নির্দিষ্ট আসনে ফিরে যান। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে বসেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের আসনে। মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে এদিনও কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবিষ্যতে রাজ্যপাল নিজের ইচ্ছায় বিধানসভায় আসতে চাইলে তা বিবেচনা করে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিধানসভার অধ্যক্ষ বলেছেন, ‘মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল যে সমস্ত অভিযোগ এবং মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ ভুল এবং অসৌজন্যমূলক। উনি রাজ্যপাল। তাই সাংবিধানিক জায়গা থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি যদি বিধানসভায় আসার জন্য নিজে থেকে ইচ্ছাপ্রকাশ করেন, তাহলে তা আমাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে।
তিনি কী কারণে আসতে চাইছেন, সেটা আমাদের জানতে হবে। তারপরই তা বিবেচনা করা হবে।’ শুধু তাই নয়, এদিনের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদলকে সম্মান করেন না। উনি নন্দীগ্রামে বিধানসভা নির্বাচনে আমার কাছে হেরে গিয়েছেন। সেই হিংসা থেকেই উনি আমাকে কোনও আমন্ত্রণপত্র পাঠাননি বা ফোন করে নিমন্ত্রণ জানাননি। গতবছরও করোনার মধ্যে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু হিংসা থেকেই তিনি এবছর আমাকে আমন্ত্রণ জানাননি। উনাকে এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে উনি আমার কাছে হেরে গিয়েছেন।’