বাংলার খবর
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে বাড়িতে অপেক্ষায় হবু স্বামী, আর ফেরা হল না রিমার

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: মাসখানেক পরই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের দিন ঠিক করতে হবু স্বামী প্রবীর রায় অপেক্ষা করছিলেন বাড়িতে। ‘এক্ষুনি আসছি’ বলেও হবু স্বামীকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আর দেখাও হল না এবং বাড়িও ফেরা হলো না হাওড়ার দাশনগরের ১৩৩ নম্বর ফকির মিস্ত্রি বাগানের বাসিন্দা রিমা সিঙের। তার আগেই তাঁর দাশনগরের বাড়িতে পুলিশ ফোন করে মৃত্যুর কথা জানায়। শুক্রবার দুপুরে পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউটপোস্টে কর্মরত কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চোডুপ লেপচার এলোপাতাড়ি চালানো গুলিতে মৃত্যু হয় রিমার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট রিমা। তখনই ওই পুলিশকর্মীর চালানো গুলি এসে লাগে রিমার শরীরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
২৮ বছর বয়সী মেয়ের এমন করুন পরিণতি হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি রিমার পরিবার। পরিবারে বাবা, ভাই, মা ও দিদাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। বছর পাঁচেক আগেই দাশনগরের এই বাড়িতে ভাড়া এসেছিল সিং পরিবার। বাবার পাঁচ বছর ধরে কারখানা বন্ধ। তাই রিমাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকোস্তব্ধ গোটা পরিবার। মেয়ে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে রেখেই রিমার মা বলছিলেন, ‘আমার মেয়েটা যে এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় হাসিমুখেই বেরোলো। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম- কখন আসবি? তখন ও বলল, -সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসব। তারপরই বাড়িওয়ালা আমাকে ডেকে বলল রিমার গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে। ওর বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বাবা মারা যাওয়ায় হবু জামাই প্রবীর নিজেই এসেছিল বাড়িতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওর বাবার পাঁচ বছর ধরে কারখানা বন্ধ। মেয়ের উপার্জনেই সংসার চলত।’
রিমার এই আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রিমার প্রতিবেশী মিঠুনবাবু জানান, ‘আমাকে হঠাৎ আমার এক আত্মীয় ফোন করে ঘটনার কথা জানায়। তারপরেই বুঝতে পারি তিনি আমার প্রতিবেশী রিমা সিঙের কথাই বলছে। রিমার বাবা দেহ সনাক্তকরণের জন্য থানাতে গিয়েছেন।’ রিমার বাড়িওয়ালা শান্তনু বাগ জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে রিমার পরিবার তাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ভালো মেয়ে বলেই এলাকাতে তাঁর পরিচিতি। আজকে তিনি টিভিতে গুলি চলার খবর দেখে রিমার পরিবারকে জিজ্ঞাসা করেন, রিমা বাড়িতে না বাইরে। এরপরই তাঁর বাড়ির লোক রিমার মোবাইলে কল করে। সেই ফোন অন্য এক ব্যাক্তি ধরে জানান, রিমার গুলি লেগেছে, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।