আন্তর্জাতিক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, চেলসির দায়িত্ব ছাড়লেন রুশ মালিক রোমান আব্রামোভিচ!

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পরল এবার বিশ্ব ফুটবলে! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন মালিক তথা রুশ বিজনেস টাইকুন রোমান আব্রামোভিচ। রবিবারই লিভারপুলের বিরুদ্ধে কারাবায়ো কাপ ফাইনালে খেলতে নামছে চেলসি। তার আগেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন ক্লাবের মালিক।
যুদ্ধের কারণেই তিনি সরে দাঁড়ালেন কি না, তা অবশ্য পরিষ্কার করে জানার নেই তিনি। এবং এখনও পর্যন্ত এই যুদ্ধ নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। পাশাপাশি, আব্রামোভিচ ক্লাব বিক্রি করে দিবেন কিনা, তাও সরাসরি জানাননি। আব্রামোভিচ দায়িত্ব ছাড়ার পর ক্লাবের দায়িত্ব এখন সামলাবেন চেলসির চেয়ারম্যান ব্রুস বাক, মেয়েদের দলের কর্তা এমা হেয়েস, ন্যাশানল লটারির প্রধান স্যর হিউ রবার্টসন এবং পিয়ারা পাওয়ার, আইনজীবী জন ডেভিন এবং অর্থনীতির প্রধান পল র্যামোস। ক্লাবের দায়িত্ব এখন এই ছ’জনই সামলাবেন। শনিবার রাতে দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানাতে গিয়ে আব্রামোভিচ বলেছেন, ‘গত প্রায় ২০ বছর ধরে নিজেকে আবি সবসময় চেলসি এফসি-এর একজন অভিভাবক হিসেবে দেখেছি।
আমার কাজছিল, আজকের মতো দলের সাফল্য নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। এবং আমাদের মধ্যে একটা ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া। আমি সব সময় ক্লাবের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ক্লাবের মান রাখা আমার কর্তব্য। সেই জন্য আজ আমি চেলসি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিদের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব ও যত্নের ভার তুলে দিচ্ছি। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে এঁরাই ব্যক্তি ক্লাবের ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ এবং সমর্থকদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।’ এটা বুঝতে অসুবিধা নেই যে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে চেলসির সুনামকে অক্ষত রাখতেই আব্রামোভিচ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে জানা গিয়েছে, আব্রামোভিচ ক্লাবের মালিক থাকবেন এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন ক্লাবকে তিনি বিক্রি করতে চাইছেন না। ক্লাবের জন্য খরচ করবেন তিনি। ব্লুজ ম্যানেজার থমাস টুচেল গত শুক্রবার স্বীকার করেছেন যে মালিক হিসাবে আব্রামোভিচের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা লিভারপুলের বিপক্ষে রবিবারের লিগ কাপ ফাইনালের আগে ক্লাবের উপর প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভান করা উচিত নয় যে এটি কোনও সমস্যা নয়। সাধারণভাবে পরিস্থিতি আমার এবং আমার কর্মীদের জন্য, খেলোয়াড়দের জন্য, ভয়ঙ্কর। কেউ এটা আশা করেনি। এটা বেশ অবাস্তব, যেমন আমি বলেছিলাম এটা আমাদের মনকে মেঘাচ্ছন্ন করে দিয়েছে।’ ইউক্রেনে-রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য গত শুক্রবার ইউকে সরকার পুতিন এবং তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ-সহ ব্রিটেনে থাকা সমস্ত রুশ ক্ষমতাবানদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। ট্রেজারি এই দু’জনের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার নোটিশও জারি করেছে এবং তাঁদের রাশিয়ান ক্ষমতাবানদের তালিকায় যুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে তাঁদের সম্পত্তি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও সেই তালিকায় নাম নেই আব্রামোভিচের। তবে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলে চেলসির দায়িত্ব অন্য কারও হাতে দিতে পারতেন না তিনি। তবে আইনজীবীদের ধারণা আব্রামোভিচের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হলেও তার মধ্যে ঐতিহ্যের কথা ভেবে চেলসি ক্লাবকে ধরা হত না। আব্রামোভিচ ২০০৩ সালে চেলসির মালিকানা গ্রহণ করেন। গত ১৯ বছরে চেলসির জন্য ১.৫ বিলিয়ন ইউরো (২ বিলিয়ন ডলার) খরচ করেছেন। এই সময়ে চেলসি অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এবং দু’টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মুকুট জিতেছে চেলসি। তবে সমর্থকদের ট্রাস্ট (সিএসটি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আব্রামোভিচের বিবৃতিটি নোট করেছি এবং চেলসি এফসি পরিচালনার জন্য এই বিবৃতিটির অর্থ কী তার জরুরী ব্যাখ্যা চাইছি। ক্লাব এবং সমর্থকদের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সিএসটি বোর্ড চেলসি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে আছি।’ গত ডিসেম্বরেই পর্তুগাল ৫৫ বছর বয়সী আব্রামোভিচকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। এবং তাঁকে ইসরায়েলের নাগরিকত্বও দেওয়া হয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই মুহূর্তে আব্রামোভিচের সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। ম্যাগাজিনের ২০২১ সালের বিশ্বের বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় তিনি ১৪২ তম স্থানে রয়েছেন।