বাংলার খবর
জন্মদিনের আগেই প্রয়াত দেশের প্রবীণতম বাঘ রাজার

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: রাজকীয়ভাবেই বিদায় নিল ‘রাজা’। বন্দি দশায় পৃথিবীর সবথেকে প্রবীণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ‘রাজা’ এর হৃৎস্পন্দন থেমে গেল। রবিবার রাত তিনটে নাগাদ মারা যায় বাঘটি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর ১০ মাস। ২০০৬ সাল থেকে রাজার ঠিকানা ছিল জলদাপাড়া বনবিভাগের দক্ষিণ খয়েরবাড়ির রয়্যালবেঙ্গল টাইগার পুনর্বাসন কেন্দ্র। সুন্দরবনের মাতলা নদী পেরোতে গিয়ে রাজার পিছনের বাঁ-পা খুবলে নিয়েছিল কুমির। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের তৎকালীন পশু চিকিৎসক প্রলয় মণ্ডল এবং বণ্যপ্রাণী রক্ষক পার্থসারথি সিনহা ও অন্যান্য আধিকারিকদের চেষ্টায় অল্প দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে রাজা। কিন্তু একটি পা না থাকায় তাকে আর জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি বন বিভাগ। তখন থেকেই এই পুনর্বাসন কেন্দ্রই তার ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। আগামী ২৩ আগস্ট রাজার ২৬তম জন্মদিন পালনের জোরদার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু তার আগেই প্রয়াত হল সে।
সুন্দরবন থেকে মাত্র ১১ বছর বয়সে রাজাকে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর থেকেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চরম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল রাজা। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক শুধুমাত্র রাজাকে দেখার জন্যই প্রতি বছর দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে ভিড় জমাতো। আর কিছুদিন পরেই তার ২৬তম জন্মদিন পালন করার কথা ছিল। তার জোড় প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন বন কর্মীরা। কিন্তু সব পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিয়ে সকলকে কাঁদিয়েই রাজকীয়ভাবে চলে গেল রাজা।
রাজার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন বন দফতরের সকল কর্মী। যিনি নিজে হাতে সেবা-সুশ্রূষা করে রাজাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন, সেই পার্থসারথি সিনহা বলছিলেন, ‘আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এই শোক আমি মুখে বলে প্রকাশ করতে পারব না। মনে হচ্ছে যেন নিজের সন্তানকে হারালাম।’ বন দফতরের চিকিৎসক উৎপল শর্মা বলেছেন, ‘বার্ধক্যজনিত কারণে রাজা কয়েকদিন ধরেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। অবশেষে রবিবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়েছে।’
আর মাত্র ৪০ দিন বাঁচলেই বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি দিন বাঁচার রেকর্ড গড়ে ফেলত এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আর তার জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম উঠে যেত তার। মৃত্যুর খবর পেয়েই রাজাকে শেষ বিদায় জানাতে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা ও জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম। ফুল-মালা দিয়ে রাজাকে শেষশ্রদ্ধা জানান তাঁরা।