রাজনীতি
দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ও অভিভাবককে হারিয়ে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী, কালীপুজোতে এ ভাবে আলো নিভে যাবে ভাবতে পারিনি
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর দীর্ঘদিনের সেই রাজনৈতিক অভিভাবক এবং সহযোদ্ধাকে হারিয়ে রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই বাড়ির কালীপুজো ছেড়ে এসএসকেএম হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তিনিই প্রথম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের কথা ঘোষণা করেন। তাঁর মন্ত্রিসভার সবথেকে অভিজ্ঞ এবং বর্ষীয়ান সদস্যের প্রয়াণের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে রীতীমতো ভেঙে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। কালীপুজোতে এ ভাবে আলো নিভে যাবে ভাবতে পারিনি। আমি সুব্রতদার মৃতদেহ দেখতে পারব না।’ পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শোক বার্তায় বলেছেন, ‘রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি বৃহস্পতিবার কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। পাশাপাশি সুব্রত’দা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন।
এছাড়া কলকাতার মেয়র হিসাবে কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয়। সুব্রতদা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর নেতৃত্বে বড় হয়েছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন। তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে এক বিরাট ক্ষতি শুধু নয়, রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি। আমি ছন্দবাণী বৌদি সহ সুব্রতদা’র পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’ ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘মমতাদি আসতে আসতে পুরো ভেঙে পড়েছিলেন। বলছিলেন জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা দেখেছি। কিন্তু এরকম ভাবে সুব্রতদার চলে যাওয়া ভাবতে পারি না।
আজ আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। রাত ৯টা ২২ মিনিটে সুব্রতদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সিভিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। স্টেন্ট বসে গিয়েছিল। বাথরুম থেকে ঘরে ঢোকার সময় একটা সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে আবারও হার্ট অ্যাটাক হয়।’ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, সুব্রতদা এইভাবে চলে যাবেন এখনও ভাবতেই পারছি না। সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি।’ তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ওঁকে দেখেই ছাত্র পরিষদের রাজনীতি শুরু করেছিলাম। ওঁর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। উনি আমার রাজনৈতিক গুরু। আজ আমার গুরুবিয়োগ হল। সুব্রতদা নেই, এটা এখনও ভাবতে পারছি না। ওঁর সঙ্গে আমার আচমকা পরিচয় হয়েছিল, আচমকাই বিচ্ছেদ হল। বাংলার রাজনীতির পাঁচ দশকের এক ইতিহাস শেষ হয়ে গেল।