বাংলার খবর
সিবিআই চান না, বিচারপতিকে জানালেন নির্যাতিতার বাবা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : ময়নাগুড়িতে ধর্ষণের চেষ্টা ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশি তদন্তের ওপরই ভরসা রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সিবিআই এর হাতে তদন্ত হস্তান্তরের আবেদনকে একেবারে নাকচ না করে দিলেও রাস্তা খুলে রাখল আদালত। সেইসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা এদিন আদালতে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা সিবিআই তদন্ত চান না। রাজ্য পুলিশের তদন্তে তারা খুশি। চাপের মুখে সিবিআই তদন্ত চাইছে না নির্যাতিতার পরিবার। মামলাকারীর অভিযোগের পর বুধবার নির্যাতিতার বাবাকে নিজের চেম্বারে ডাকেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ।
নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে একান্তে কথাও বলেন বিচারপতি। ময়নাগুড়িতে ধর্ষণের চেষ্টা ও আত্মহত্যার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি ছিল। এদিনের শুনানিতে প্রথম থেকে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার বাবা। শুনানিতে উপস্থিত থাকতে উত্তরবঙ্গ থেকে গাড়ি ভাড়া করে তিনি কলকাতায় এসেছেন বলে জানান। তাঁর আইনজীবী আদালতকে জানান নির্যাতিতার বাবা সিবিআই তদন্ত চাইছেন না। তাঁরা পুলিশি তদন্তেই খুশি। যা শুনে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই যাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন, কী এমন ঘটল যে হঠাৎ তাঁরা সিবিআই তদন্ত থেকে সরে আসছেন! রাজনৈতিক চাপে নির্যাতিতার পরিবার সিবিআই তদন্ত থেকে সরে এল! সেই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে আদালতে। যদিও নির্যাতিতার বাবার আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ ছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিও জানিয়ে দেন, নির্যাতিতার বাবা এই মামলা তদন্ত অন্য কোনও সংস্থায় হস্তান্তরের আবেদন করছেন না। এরপরই প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ নির্যাতিতার বাবাকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে গিয়ে একান্তে কথা বলেন। পরে আমাদের প্রতিনিধি নির্যাতিতার বাবাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘আমরা রাজ্য পুলিশের তদন্তে খুশি। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করেছে। তাই আমি সিবিআই তদন্ত চাইছি না। গ্রামের লোকেরাও আমাকে বলেছিল পুলিশ যখন তদন্ত করছে তখন সিবিআই এর কী দরকার! আমি সিবিআই কী ব্যাপার বুঝিনা।’
আরও পড়ুন – ১৫ বছর ধরে পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার বাসিন্দারা, রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে
বুধবার শুনানি চলাকালীন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন রাজনৈতিক চাপে নির্যাতিতার বাবা সিবিআই তদন্ত থেকে সরে এসেছেন। সেইসঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদন করেন আদালতের কাছে। আদালতে উপস্থিত কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে রাজি বলে জানান। তারপরই আদালত নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যের ডিজিকে দায়িত্ব দেন। সেই সঙ্গে একজন আইজি পদমর্যাদাসম্পন্ন অফিসারের নজরদারিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জামাকাপড় ও ধারালো অস্ত্রসহ যে সিজার লিস্ট তৈরি করেছিল পুলিশ, তা না পড়িয়েই তাতে সাক্ষীদের সই করানো হয়েছিল বলেও এদিনের শুনানিতে অভিযোগ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। সেই সিজার তালিকায় সাক্ষী হিসেবে সই করেছিলেন স্থানীয় পদ্মাবতী পঞ্চায়েতের সদস্য বাদল রায় ও পরিতোষ রায়। এদিন তাঁরা সশরীরে উপস্থিত থেকে আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের যে সিজার লিস্টের সই করানো হয়েছে তা তাঁরা জানতেনই না! বাদল রায় পরে বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজকে বলেছেন, ‘পুলিশ আমাদের একটা কাগজে সই করিয়ে ছিল। সেটা যে সিজার লিস্ট, তা আমরা জানতাম না। সেই তালিকায় কী ছিল সেটাও আমরা জানি না। সেই তালিকায় আর কারা সই করেছে এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া জিনিস গুলো কোথা থেকে উদ্ধার হয়েছে, তার কিছুই আমরা জানি না।’ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১১ মে।
আরও পড়ুন – পি চিদাম্বরমকে ঘিরে হাইকোর্টে বিক্ষোভ