বাংলার খবর
কেতুগ্রামে স্ত্রীর কব্জি কেটে নেওয়ার ঘটনার তিন দিন পর গ্রেফতার অভিযুক্ত স্বামী

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পাওয়ায় পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুন নামে গৃহবধূর কব্জি থেকে ডান হাত কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। সেই ঘটনায় সোমবার রাতেই রেণুর শ্বশুর ও শাশুড়ি সিরাজ শেখ ও মেহেরনিকা বিবিকে কেতুগ্রামের চাকটা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন মূল অভিযুক্ত রেণুর স্বামী সফিরুল শেখ। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছিল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। অবশেষে তিন দিন পর সাফল্য এল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের এক প্রান্তে ঘাপটি মেরে ছিলেন সফিরুল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রাম ও মুর্শিদাবাদের সীমানায় এক গোপন ডেরায় লুকিয়ে ছিলেন সফিরুল। মুর্শিদাবাদ হয়ে বাইরে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষে ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই পুলিশ তাঁর ওপর নজর রাখছিল। এদিন সন্ধ্যায় সাদা পোশাকে ওঁৎ পেতে ছিল পুলিশ। তখনই পালানোর সময় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, বাইরে থেকে টাকার বিনিময়ে দুই সুপার কিলারকে ভাড়া করে বন্ধু সাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেণুর কব্জি কেটেছে সফিরুল। ইতিমধ্যেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। বাবা, মা ও ছেলেকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ পরিকল্পনা রয়েছে তদন্তকারী অফিসারদের। কোথা থেকে ওই সুপারি কিলারদের ভাড়া করা হয়েছিল, তাদের পরিচয় কী, কত টাকার বিনিময় সুপারি দেওয়া হয়েছিল, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। যদিও জেরার মুখে সফিরুল পুলিশকে জানিয়েছেন, রেণুকে খুন করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। যাতে তাঁর স্ত্রী চাকরি করতে না পারেন এবং তাঁর সঙ্গেই সংসার করেন, সেই কারণেই হাত কেটে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
এখনও দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রেণু। তাঁর কাটা হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তাঁর চাকরি পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না বলে ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তবে সফিরুলে সঙ্গে তিনি আর সংসার করবেন না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রেণু। এমনকি, দোষীদের কঠিন শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে অদম্য জেদ ও মনের জোরকে সম্বল করেই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে শুরু করে দিয়েছেন রেণু। ডান হাত কাটা গিয়েছে। তাই হাত কাটা যাওয়ার চারদিন পর থেকেই বাঁহাতে লেখার অনুশীলন শুরু করেছেন রেণু। হাতের লেখা অতটা সুন্দর না হলেও বাঁ হাতেই লিখে ফেলেছেন নিজের নাম ও বাড়ির ঠিকানা।