খেলা-ধূলা
শ্রমদফতর ও আইএফএ-এর যৌথ উদ্যোগে এবার উত্তরবঙ্গে টী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : পাহাড়ে আবার ফুটবল কার্নিভ্যাল। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘টী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রমদফতর এবং লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে আইএফএ। দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে প্রথমবার আয়োজিত হবে ‘টী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’।
আগামী পয়লা মে ওলদাবাড়িতে প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে জলপাইগুড়ি স্টার্স এবং জলপাইগুড়ি রয়্যালস। ফাইনাল ১৪ মে দার্জিলিংয়ের লেবংয়ে। এছাড়াও কমলা টী স্টেট এবং বীরপাড়া জুবলি ক্লাব মাঠেও অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের ম্যাচ। প্রতিযোগিতার পুরস্কার মূল্য ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে টুর্নামেন্টের সূচি প্রকাশ এবং ট্রফির উদ্বোধন হয়ে গেল। উপস্থিত ছিলেন শ্রম দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী বেচারাম মান্না। উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতার ময়দানে প্রতিভাবান ফুটবলারের যোগান বাড়াতে এবং বাংলার ফুটবলের স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনতেই এই ধরনের টুর্নামেন্টের আয়োজনে বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকবার উত্তরবঙ্গে গিয়েছি। সেখানে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। ভালো প্রতিভাবান খেলোয়াড় তুলে এনে কলকাতার মাঠে তাদের খেলানোর ব্যবস্থা করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।
আগে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর খেলোয়াড় কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবে খেলত। কিন্তু সেই সাপ্লাই লাইনটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমরা আবার সেটা চালু করতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় বাংলার ফুটবলের স্বর্ণযুগকে আবার ফিরিয়ে আনব আমরা। তার শুরুটা এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়েই আমরা করতে চাই। উত্তম কুমার অভিনীত ধন্যি মেয়ে সিনেমাটা দেখলেই বোঝা যায়, আমরা কতটা ফুটবলপ্রেমী। ফুটবল শুধু একটা খেলা নয়, ফুটবলের মাধ্যমে সম্প্রীতি, নিয়মানুবর্তিতা, শরীরচর্চা, মানসিক শক্তির বিকাশ সবকিছুই হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যে ধর্মের নামে কোনও ভেদাভেদ করে না। ফুটবলেও সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে একটা দল হয়ে খেলে। এতে সম্প্রীতির ঐক্য তৈরি হয়। শ্রমদফতর এবং লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ড শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন কলকারখানা, চা বাগান ও অন্যান্য সংস্থার মালিক পক্ষ এবং শ্রমিকরা তহবিলে ষান্মাসিক ১৮ টাকা করে জমা করেন। যার মধ্যে মালিকপক্ষ দেয় ১৫ টাকা ও শ্রমিকপক্ষ তিন টাকা।
পর্ষদের এই তহবিল থেকে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য খেলাধুলো, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হ।য় এছাড়া বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়। এবছর উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য এই ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তবে গোটা বিষয়টি দেখছে আইএফএ। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার দিন আগে একটি মহিলা ফুটবলারদের নিয়ে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলা হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। চার অঞ্চলের প্রত্যেকটি থেকে চারটি করে, মোট ১৬টা দল অংশ নেবে প্রতিযোগিতায়। প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকে ছ’টা করে মোট চব্বিশটি খেলা হবে। এবং দুটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল মিলিয়ে মোট ২৭টি ম্যাচ হবে। প্রত্যেক দলে চারজন করে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলার থাকবে। তার মধ্যে প্রথম একাদশে দু’জনকে খেলানো বাধ্যতামূলক।
এই টুর্নামেন্টের জন্য গত ৮ থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ারের চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করেছে আইএফএ। এই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতে আইএফএ-এর নিজস্ব অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইএফ-এর সহসভাপতি তনুময় বসু। উত্তরবঙ্গের এই চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। সেই প্রতিভাদের তুলে আনতে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন বলে জানিয়েছেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ভবিষ্যতে মহিলাদের নিয়েও এই ধরণের টুর্নামেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবারে সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায়, শ্রমদফরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি বরুণ রায়, লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডে সভাপতি সবিতা মুখোপাধ্যায়।