বাংলার খবর
দুপুরে হাসপাতালের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ মারা সুজিতের মৃত্যু হল সন্ধ্যায়
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রায় পাঁচ ঘণ্টার লড়াই শেষ। কলকাতা মল্লিক বাজার নিউরো সাইন্স হাসপাতালের আট তলার কার্নিশ থেকে ঝাঁপ মারা রোগীকে বাঁচানো গেল না। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ মৃত্যু হল সুজিত অধিকারীর। শনিবার সকাল ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাসপাতালে কার্নিশে বসে থাকার পর দুপুর একটা নাগাদ সেখান থেকে ঝাঁপ মারেন সুজিত। আট তলা থেকে নিচে পড়ে মাথায়, বুকে গুরুতর চোট পান তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালের আইটিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ প্রয়াত হলেন তিনি।
এই ঘটনার পর বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে চিকিৎসক অভিক রায়চৌধুরী হাসপাতালের সিইও ও চিকিৎসক জয়িতা বসু এবং অতিরিক্ত সিইও অর্পিতা মন্ডল দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনি। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ওই রোগীকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সব রকম ভাবেই তাঁরা করেছিলেন। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁরা ভবিষ্যতে আরও সজাগ হবেন বলেই আশ্বাস দিয়েছেন।
লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী সুজিত গত ২৩ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আট তলার এইচডিইউ ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। দু’দিন চিকিৎসার পর শনিবারই তাঁকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং সুস্থ ছিলেন। এই ঘটনা ঘটানোর আগে তিনি সকলের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তাও বলেছিলেন। সকাল ১১টা নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখে সুজিত জানলা খুলে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। প্রথমে নার্সরা তাঁকে ধরেও ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি নাকি নার্সদের কামড়ে দেন এবং তারপরই জানলা দিয়ে বাইরের কার্নিশে চলে যান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, সুজিতের বেডের পাশেই ছিল সেই জানলা। জানলার একটি বোল্ট কাটা অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। এবং বেড অপারেট করার চাবি কার্নিশে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমান, সেই চাবি দিয়েই জানলার ওই বোল্ট খোলেন ওই যুবক। গোটা ঘটনার অন্তর্তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন সুজিতের স্ত্রী। প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করেও স্ত্রীকে বাঁচাতে না পারায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। মাথা ঘুরে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে খিঁচুনির সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকে নিউরো সায়েন্স ভর্তি করতে হয়েছিল। তাঁদের ৫ ও ৯ বছরের দুই ছেলে রয়েছে। সুজিতের মৃগীরোগ ছিল বলেও জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ ঘটনায় হাসপাতালের থেকে স্বাস্থ্য দফতর রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।