খেলা-ধূলা
জীবনকে উপভোগ করার দর্শন শেখালেন সৌরভ, ভবিষ্যতে কি তাঁকে ভারতের কোচ হিসেবে দেখা যাবে? কী বললেন দাদা?

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ‘বাঁচার জন্য বাঁচুন। মরতে তো একদিন হবেই।’ করোনা অতিমারির মধ্যে মানসিক ও শারীরিক ভাবে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তার উপায় বলে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার এক হোটেলে বেঙ্গল পিয়ারলেস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমনই বার্তা দিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বিসিসিআই সভাপতি। কোভিড পরবর্তী জীবনে সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় বেঙ্গল পিয়ারলেসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর সৌরভ ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. সুজিত কর পুরকায়স্থ, ড. দেবরাজ কর পুরকায়স্থ এবং ড. শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল পিয়ারলেস হাউজিং ডেভেলপমেন্ট সংস্থার সিইও কেতন সেনগুপ্ত। করোনা অতিমারির পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা, সূর্যরশ্মির উপকারিতা থেকে শুরু করে ক্রিকেট- সবকিছু নিয়েই কথা বললেন সৌরভ। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ এক অন্য সৌরভকে পাওয়া গেল। সদ্যপ্রয়াত প্রিয় বন্ধু তথা কিংবদন্তির লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নকে হারানোর আক্ষেপও শোনা গিয়েছে দাদার গলায়। ভবিষ্যতে তাঁকে ভারতীয় কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে কিনা সেই উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি রাহুল দ্রাবিড়, গ্রেগ চ্যাপেল, রবি শাস্ত্রী- সব প্রসঙ্গ নিয়েই খোলামেলা কথা বললেন বিসিসিআই সভাপতি।
খেলার দুনিয়া তাঁকে ‘কামব্যাক কিং’ হিসেবেই চেনেন। সমস্ত মানসিক চাপ, নেতিবাচক দিকগুলোকে ‘বাপি বাড়ি যা’ বলে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়, তারই পাঠ দিলেন সৌরভ। এদিনের অনুষ্ঠানে সৌরভ বলেন, ‘ বাঁচার জন্য বাঁচুন, মরার জন্য নয়। মরতে তো একদিন সকলকেই হবে। আমার বাড়িতেও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আবার সম্প্রতি আমি এক আমার নিকট আত্মীয়কেও হারিয়েছি। সকলের শরীরেই কোনও না কোনও রোগ রয়েছে। তার চিকিৎসা তো করতে হবে। পাশাপাশি সেগুলো নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে আনন্দ, শান্তি, মানসিক সুস্থতা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এগুলো নিজের ওপরই নির্ভর করে। মানসিক চাপকে আমি অন্যভাবে দেখি। সকলেরই স্ট্রেস আছে। যে সাধু হিমালয় ধ্যান করেন তারও স্ট্রেস আছে। তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তাই বাঁচার জন্য আমাদের বাঁচতে হবে। মরার জন্য বেঁচে থেকে কোনও লাভ নেই।’
আর এই প্রসঙ্গে সদ্যপ্রয়াত শেন ওয়ার্নের উদাহরণও টেনে আনেন সৌরভ। বলেছেন, ‘আমাদের জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নেই। আমি শেন ওয়ার্নের সঙ্গে খেলেছি। মাঠে ওর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ও আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। সেই ওয়ার্নের মতো ক্রিকেটার সারা জীবন সূর্যের আলোয় মাঠের মধ্যেই কাটিয়েছে। একদিন হঠাৎ করেই ও চলে গেল। ওয়ার্নের মাত্র ৫২ বছর বয়সে চলে যাওয়াটা আমার কাছে বড় ধাক্কা। যারা স্ট্রেসকে হ্যান্ডেল করতে পারে তারাই সফল হয়। তারাই বেশি দিন বাঁচে। আমি জীবনকে কীভাবে দেখছি সেটাই আসল। কীভাবে জীবন যাপন করছি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস বা চাপের কাছে মাথা নত নয়, তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যা ঘটার তা ঘটবেই। তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। যেখানে তুমি খুশি থাকবে, সেটাই তোমার জন্য সেরা জায়গা। জীবনে কোনও কিছুর জন্য ভয় পেলে চলবে না। সমস্ত কিছুর সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তাই সবসময় মাথা উঁচু করে বাঁচো। আমি জীবনের বাকি সময়টা এই কথাগুলোই মনে রাখতে চাই।’
আরও পড়ুন: কাতার বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল
জীবন দর্শন নিয়ে সৌরভের এই কথাগুলো সাধারণ ছাপোষা মানুষদের কাছে সত্যিই বড় অনুপ্রেরণার। মহারাজের এই কথাগুলো শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেরই মনে হচ্ছিল প্রাক্তন ক্রিকেটার বা অধিনায়ক বা ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তা কথাগুলো বলছেন না। কথাগুলো বলছেন কোনও মনোবিদ বা দার্শনিক। তবে এই গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যেও মজার রসদও ছিল সৌরভের বক্তব্যে। এই কথাগুলো বলতে বলতেই সহাস্যে সৌরভ বলে ওঠেন, ‘আমি এত গুছিয়ে কথা বলছি শুনে অনেকেই ভাবছেন আমি বাড়ি থেকে কোনও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোনও প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। একমাত্র ক্রিকেট ছাড়া আমি কোনও কিছুরই আগে থেকে প্রস্তুতি নিতাম না। আমার এত গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতা থাকলেও শুধু গ্রেগ চ্যাপেলকেই সন্তুষ্ট করতে পারলাম না।’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেখানে উপস্থিত সেখানে ক্রিকেটের প্রসঙ্গ উঠবে না তা কখনও হয়! এই অনুষ্ঠানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একদা সতীর্থ তথা বর্তমানে ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়, রবি শাস্ত্রী এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও অনেক কথাই বললেন প্রিন্স অফ কলকাতা। এককালীন সতীর্থ এবং বর্তমানে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পান কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে সৌরভ বলেছেন, ‘দ্রাবিড় একই রকম আছে। একটুও বদলায়নি। ক্রিকেটার হিসেবে ওর মধ্যে যে সূক্ষ্মতা এবং গুণগুলো ছিল, কোচ হিসেবেও ওর মধ্যে সেগুলো আছে। শুধু একটাই পার্থক্য, এখন আর ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে তিন নম্বরে নামতে পারে না। তবে, ব্যাট করতে নেমে সেই সময়ের বিপক্ষের সেরা বোলারদের মুখোমুখি হওয়াটা অনেক কঠিন ছিল। সেই তুলনায় এই কাজটা অনেকটাই সহজ। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তবে আমার বিশ্বাস, কোচ হিসেবে দ্রাবিড় একদিন সাফল্যের শিখরে পৌঁছবে।’
আরও পড়ুন: সিএসকে-এর অধিনায়কত্ব জাদেজার হাতে তুলে দিলেন ধোনি, এটাই কি মাহির শেষ আইপিএল!
বিসিসিআই সভাপতির দায়িত্ব, টিভি শো, বিজ্ঞাপনের কাজ, বাড়ি- সবকিছুকে একসঙ্গে সমানভাবে সামলাচ্ছেন। সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, তিরাশির বিশ্বকাপ, শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সেওয়াগ, কুম্বলে, লক্ষণ, ধোনির খেলা এবং অবশ্যই শিল্পপতি রতন টাটা তাঁকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে বলেও জানিয়েছেন সৌরভ। স্বাভাবিকভাবেই এসেছে তাঁকে ভবিষ্যতে ভারতের কোচ হিসেবে দেখা যাবে কিনা- সেই প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সর্তক হয়েই সৌরভের ইঙ্গিতপূর্ণ উত্তর, ‘জানিনা কী হবে। সবকিছুই একদিন শেষ হয়। আমি এখন যে ভূমিকাটা পালন করছি, এই ভূমিকাটা শেষ হলে এবং পরে সুযোগ এলে ভেবে দেখবো। জীবন কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না। তবে এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা মুশকিল।’ এই অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বেঙ্গল পিয়ারলেসের নতুন বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্পের উন্মোচন করা হয়। ইএম বাইপাসের ধারে গড়ে উঠবে ৪৭ তলার সবথেকে উঁচু বিলাসবহুল আবাসন ‘অভিদীপ্তা টু’।