বাংলার খবর
১৬ বছর পর নিজের পরিবার খুঁজে পেল হোমে বেড়ে ওঠা সোহিনী
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজঃ একটা, দুটো বছর নয়, সময়টা ১৬ বছর! মা হোমে ছেড়ে চলে গেলেও দেড় দশকেরও পর ঘরে ফিরল ঘরের মেয়ে। শুনতে অবাক লাগলেও, বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। আর সেই মেয়েকেই দেখতে সকাল থেকেই গ্রামবাসীদের আনাগোনা।
এ নিয়ে এখন উৎসবের মেজাজ চন্দ্রকোনার ঘোষাল পরিবারে। ঘটনার সূত্রপাত বছর ষোলো আগে। ২ বছরের শিশু সোহিনীকে বিদ্যাসাগর হোমের সামনে বসিয়ে দিয়ে চলে যান তাঁর মা। তারপর থেকে কোনও খবর পাওয়া যায়নি তাঁর। দু’বছরের শিশুর পক্ষে পরিবারের কারোর নাম বলা সম্ভব হয়নি। তাই ওই দুধের শিশুর পরিবারের খোঁজও পাওয়া যায়নি। ফলে তারপর থেকে সোহিনীর স্থান হয় মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা হোমে। হোমে ঠাঁই হওয়ার পর থেকেই সোহিনীর পরিবারের খোঁজ শুরু করে জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর ও হোম কর্তৃপক্ষ। আর সেই খোঁজার পক্রিয়া শেষ হল ১৬ বছর পর। অবশেষে গোবিন্দ ঘোষাল নামের সূত্র ধরে এক দশকেরও পর সন্ধান পাওয়া যায় সোহিনীর বাবার।
গত বুধবার বিকেলে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৬ বছরের সোহিনীকে। হোম কর্তৃপক্ষ জানতে পারে গোবিন্দ ঘোষালের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীরপুর জেলার চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বারিন্যা গ্রামে। স্থানীয় এক এনজিও এবং প্রশাসনের মাধ্যমে ডেকে পাঠানো হয় গোবিন্দবাবুকে। দীর্ঘ আলোচনা ও সোহিনীর সম্মতিতে গোবিন্দ ঘোষালের হাতে তুলে দেওয়া হয় সোহিনীকে। জানা যায়, সোহিনীর মা ঘর ছাড়ার পর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বামীর সঙ্গেও তিনি কোনও যোগাযাগ করেননি। সোহিনীর বাবা, জেঠুরাও এতদিন খোঁজ করে কোনও হদিশ করতে পারেননি তাঁদের মেয়ের। স্ত্রী ঘর ছেড়়ে চলে যাওয়ার পর আর বিয়ে করেননি গোবিন্দবাবু।
আশা ছিল, স্ত্রীকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর মেয়েটাকে যদি ফিরে পেতেন, তাহলে মেয়ের হাত ধরেই বাঁচতে পারতেন বাকিটা জীবন। তাই প্রতিটি দিনই মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন গোবিন্দবাবু। ছোট্ট থেকে হোমকেই পরিবার বলে জেনে এসেছে সোহিনী। তাই তার কাছে যখন সবটা পরিস্কার হল, ঘরের ফেরার আনন্দে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল ষোড়শীরও। বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, নতুন পরিবারকেই বা আপন করতে পারবেন কিনা, সোহিনীর কাছে জানতে চেয়েছিল হোম কর্তৃপক্ষ। সোহিনী জানিয়েছে, সে পরিবারের কাছে ফিরতে চায়, তাই কোনও কথা না বলে সে বাবার কাছে ফিরেছে খুশি মনে।