বাংলার খবর
‘ধমকানি নয়, কাজের চমকানি দেখান’, কর্মীদের কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ঝাড়গ্রামের কর্মীসভা থেকেই আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই সমস্ত কাজ শেষ করার জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তিনি। ‘ধমকানি নয়, কাজের চমকানি দেখান’- বলেও কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার জঙ্গলমহল সফরের শেষ দিনে, দলীয় কর্মী সভা থেকে ঝাড়গ্রামে তাঁর সরকারের উন্নয়নের খতিয়ানও তুলে ধরে গত বাম সরকারকেও বিঁধতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ঝাড়গ্রামের মানুষ পিঁপড়ে খেয়ে থাকত। এখন কেউ অনাহারে থাকে না। দুয়ারে রেশন, দুয়ারে সরকার পৌঁছে গিয়েছে। আগে ঝাড়গ্রামে মানুষ আসতে পারত না। সিপিএম কাউকে যেতে দিত না।
আমলাশোলে মানুষের অনাহারে মৃত্যু মিছিল দেখেছি। ঝাড়গ্রামে মানুষ আগে ৯ মাস ভাত পেত না। এখন স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, রাস্তা ঘাট, সেতু, বাজার, স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন জঙ্গলমহলের মানুষ। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাধ্যমে সরাসরি মা-বোনেদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাচ্ছে। কেন্দ্র গম দিচ্ছে না, ১০০ দিনের কাজে টাকা দিচ্ছে না। আমরা তাও সবকিছু চালিয়ে যাচ্ছি। বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। আগে ঝাড়গ্রামে অনুর্বর জমি ছিল। এখন জমি উন্নত হয়েছে। জলকষ্ট দূর করতে আগেই ৫০০ কোটি টাকার চেক ড্যাম হয়েছিল। জলের সমস্যা মেটাতে আগামী দিনে আরও পুকুর কাটা হবে।’ এ ছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের ছাগল-মুরগি প্রতিপালন, মাদুর শিল্প, ধামসা-মাদল, পাথর শিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারেও তিনি তৎপর বলে জানিয়েছেন। ঝাড়গ্রামে পর্যটনের ভালো সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়ে সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপরই সভায় উপস্থিত দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের পরিষেবায় কোনরকম দুর্নীতি, বেনিয়ম করা যাবে না। বর্ষার আগেই সমস্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার আগেই সমস্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু গ্রাম পঞ্চায়েত নয়, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিকেও দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, কাজ ফেলে রাখবেন না। কাজ করুন চটপট। তৃণমূল সুপ্রিমো এ দিন বলেছেন, ‘পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে সব কাজ শেষ করুন। মানুষের কাজ ফেলে রাখবেন না। মানুষের কাজ দ্রুত করতে হবে। আমাদের চালু করা বিভিন্ন প্রকল্পে কেউ টাকা কম দিলে আমাকে সরাসরি জানান। ডিএম-কে চিঠি লিখবেন। কাউকে কবর দিতে হলে বা কফিন দিতে হলে বা দাহ করতে হলে ২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কেউ যদি তার থেকে এক পয়সা কম দেন, আপনারা নেবেন না। সমব্যাথী প্রকল্পের টাকা না পেলে এফআইআর করুন। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমি নেব। প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ করবে। বর্ষা আসার আগেই টেন্ডার করে সব কাজ শেষ করে দিন। আগামী ২১ থেকে ৩১ মে আবার দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চালু হচ্ছে। যাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন করতে পারছেন না, যারা দুয়ারে সরকারের ফর্ম ফিলআপ করতে পারবেন না, তাদের সাহায্য করুন। একটা টাকাও নেবেন না। বিনা পয়সায় করে দেবেন। মনে রাখবেন এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এটা মা, মাটি, মানুষের সরকার। আমরা কোনও রকম বেনিয়ম, দুর্নীতি বরদাস্ত করব না।
ধমকানি নয়, কাজের মাধ্যমে চমকানি দেখান। মানুষের মন জয় করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছি আমরা। আজকে ঝাড়গ্রাম সহ গোটা জঙ্গলের মা-বোনেদের মুখে হাসি ফুটেছে। আজ তারা খেতে পাচ্ছেন। ছেলে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল পাচ্ছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পাচ্ছে। আমাদের এই উন্নয়ন গুলোকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন।’ এরপরই কর্মীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘আমি কেউ নই। আমি নই, আমরা। এই কথাটা মেনে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করুন। ভোটে হেরে গিয়ে বিজেপি বাংলার বদনাম করতে চাইছে। তাই বিজেপি, সিপিএম কে বিশ্বাস করবেন না।’