জীবনের ২২গজেও হাফসেঞ্চুরি করে ফেললেন সৌরভ
Connect with us

খেলা-ধূলা

জীবনের ২২গজেও হাফসেঞ্চুরি করে ফেললেন সৌরভ

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ৮ জুলাই। বাংলা ও বাঙালীর কাছে দিনটা ‘বামপন্থী দিবস’ বললে ভুল কিছু বলা হবে না। আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছেন ক্রিকেট ও রাজনীতির ২২ গজের দুই মহিরুহ। একজন দেশের প্রাক্তন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তথা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অপরজন প্রবাদপ্রতিম বামপন্থী নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

দাদা, মহারাজ, বেঙ্গল টাইগার, আরও কতই না পরিচয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ১৯৭২ সালের এই দিনেই ভারতীয় ক্রিকেটের নবজাগরণের কান্ডারীর জন্ম হয়েছিল। তারপর কত প্রশংসা, কত নিন্দা, কত বিতর্কের মাঝেই কাটিয়ে দিলেন জীবনের ৫০টা বসন্ত। ক্রিকেটকে যিনি আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন, যিনি সর্বকালের সেরা অধিনায়ক, ক্রিকেট বিশ্ব যাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি দিয়েছে, জীবনের প্রথম দিন থেকে অসংখ্যবার হারতে হারতে হারের কিনারা থেকে যিনি ফিরে এসেছেন সাফল্যের স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গনে, তিনি হলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুক চিতিয়ে লড়াই করে বারবার ফিরে আসা, স্পর্ধা, আত্মবিশ্বাস, চোখে চোখ রেখে কথা বলা, হার না মানা জেদের আরেক নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। বিচক্ষণ বুদ্ধি এবং রাজকীয় ঔদ্ধত্য নিয়ে বিপক্ষ দলকে শাসন করেছেন। আজ যে ভারতীয় ক্রিকেট সারা বিশ্বে অত্যন্ত সমীহ আদায় করছে, তার অন্তরালে আছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লড়াকু মেজাজ। তিনিই প্রথম বিদেশীর চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। স্টিভ ওয়ার মতো অধিনায়ককে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন টস করানোর জন্য। অহংকার আর রাজকীয় মহিমায় শাসন করেছেন ক্রিকেট বিশ্বকে। অধিনায়কের পাশাপাশি ক্রিকেটার সৌরভের কোনও তুলনা নেই। ব্যাটিং এর পাশাপাশি মিডিয়াম পেসার হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রায় ১৯ হাজার আন্তর্জাতিক রানের মালিক। আর তাঁর ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক ও লড়াকু মেজাজকে বিশ্বের ক্রীড়া সমালোচকরা বারবার কুর্নিশ করেছেন।

২০৬তম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে আত্মপ্রকাশ লর্ডসে ১৯৯৬ সালের ২০ জুন। তার আগে সৌরভের ওপর অনেক ঝড় ঝাপটা বয়ে গিয়েছে। অন্য কেউ হলে হয়তো খেলার জগতকে বিদায় জানিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতেন। পারিবারিক ব্যবসা সামলাতেন। কিন্তু সৌরভের রক্তে ছিল ক্রিকেট, তাই বারবার সৌরভ খেলার মাঠে ফিরে এসেছেন, অপমানিত হয়েছেন, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন, হাজার লক্ষ মানুষের সহানুভূতি আদায় করেছেন, জ্বলে উঠেছেন বীর বিক্রমে। তাই বলা হয় অপরাজেয় পৌরুষের আরেক নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম। ওয়ার্ল্ডকাপ হাতে ভিকট্রি ল্যাপ দিচ্ছেন রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। আর অদূরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের সেই আনন্দের দৃশ্যে কিন্তু যন্ত্রণায় বিদীর্ণ হয়েছিলেন তদকালীন সৌরভের নেতৃত্বাধীণ মেন ইন ব্লু। কান্না ডুকরে উঠেছিল ১১০ কোটির ভিতরেও। ২রা এপ্রিল, ২০১১ সাল মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে মাস্টার ব্লাস্টারকে কাধে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করছে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সদ্য বিশ্বকাপ জেতা ধোনির মেন ইন ব্লু। আট বছরের স্বাদ পূর্নতা পেয়েছিল সেদিন। স্বাধীনতার পতাকা দিল্লির লালকেল্লায় যেদিন উত্তোলিত হয়েছিল সেদিন সেখানে ছিলেন না নেতাজি। তেমনই সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ওয়াংখেড়ের সবুজ ঘাসে পা রাখতে পারেননি সৌরভ। কিন্তু ছিলেন তাঁর পুরোনো সতীর্থরা। তাঁর নিজের হাতে গড়া দল।এই দুই দৃশ্যের মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক যাত্রা ও অধ্যায় রয়েছে। যেই অধ্যায় লিখেছেন কলকাতার বেহালার বীরেণ রায় রোডের সেই ছেলেটাই। কারণ নিজে অধিনায়ক থাকাকালীন অন্য পথ বেছে নিয়েছিলেন সৌরভ। নতুন প্রজন্মকে তুলে এনেছিলেন তাঁর দলে। তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, মহম্মদ কাইফ, এমএস ধোনি, আশিস নেহেরা, জাহির খানের মতো বড় নাম। যাঁরা দীর্ঘদিন ভারতের হয়ে সাফল্য এনে দিয়েছেন।

২০০২ সালের ১৩ জুলাই, লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ডকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়েছিল ভারত। আর জয়ের পরই ঐতিহ্যশালী লর্ডসের ঐতিহাসিক ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জার্সি খুলে মাথার ওপর ঘুরিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিশ্বক্রিকেটে অধিনায়ক হিসাবে মহারাজের দাদাগিরিরও যেন সেই শুরু। ব্রিটিশদের দর্পচূর্ণ করার সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে রয়ে গিয়েছে বিশ্বক্রিকেট। যে দৃশ্য শুধু ভারতীয় ক্রিকেটে নয়, গোটা বিশ্বেই অমর হয়ে রয়েছে।

এবারের ৮ জুলাই সৌরভের কাছে স্পেশ্যাল। কারণ, জীবনের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করছেন সৌরভ। তাই পঞ্চাশতম জন্মদিনের আগের দিন ফের সেই ঐতিহাসিক ব্যালকনিতে দেখা গিয়েছে সৌরভকে। ফের এক জুলাইয়ের বিকেলেই। তাই অন্যান্যবার জন্মদিনে ভক্তরা বীরেন রায় রোডের বাড়ির সামনে কেক, ফুল নিয়ে ভিড় করেন। এবার সেই সুযোগ নেই। কারণ সৌরভ রয়েছেন লন্ডনে। জন্মদিনের আগেই সেখানে তাঁর প্রি বার্থ ডে পার্টি হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিলেন বোর্ডের সমস্ত শীর্ষকর্তা। সেই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার শচীন তেন্ডুলকর। বাঙালি তথা আপামর ভারতবসীর অনুপ্রেরণা ও আইকনের জন্মদিনের হাফসেঞ্চুরিতে বেঙ্গল এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকেও রইল অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

Advertisement