দেশের খবর
সরস্বতী পুজোয় কোভিড বিধি উপেক্ষা করেই উদ্দাম নাচ-গান কলেজ পড়ুয়াদের! শঙ্কিত চিকিৎসকরা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: দু’বছর পর স্কুল-কলেজ খুলছে রাজ্যে। এই দু’বছর করোনার দাপটে হয়নি বাগদেবীর আরাধনা। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলেছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এবারে রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটা করে হচ্ছে বাগদেবীর আরাধনা।
কলকাতার সমস্ত নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল নজরে পড়ার মতো। বাগদেবীর আরাধনার দিন বন্ধু-বান্ধবীদের দেখতে পেয়ে খুশি সকলেই। অনেক স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের এই মিলন উৎসব দেখতে হাজির অভিভাবকরাও। কলকাতার কলেজস্ট্রীট অঞ্চলে এইরকম মিলন উৎসবের সাক্ষী থাকল সকলে। সরস্বতী পুজো বলে কথা। দু’বছর পরে সরস্বতী পুজো। করোনার জন্য বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। দীর্ঘদিন পর বাগদেবীর আরাধনার দিন বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা। তাই উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙ্গল বহু জায়গায়। আর তাতেই নতুন করে তৈরি হল আশঙ্কা। করোনার বিধি-নিষেধ ভেঙে চলল দেদার মজা, আনন্দ, নাচ, গান। একবারে নাইট ক্লাবের মুডে। এমনই চিত্র ধরা পড়ল কলকাতার রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে।
সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কলেজে জড়ো হয়েছিল সকল ছাত্র-ছাত্রীরা। এত অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বদ্ধ ঘরের মধ্যে গানের তালে নৃত্যে মেতে উঠলেন কলেজ পড়ুয়ারা। কারও মুখেই ছিল না মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব বিধিও লাটে উঠেছিল। শনিবার রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে এই চিত্র দেখে আঁতকে উঠছেন সকলেই। গত ৩১ জানুয়ারি স্কুল খোলার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার কোভিড বিধি মেনে চলার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করেছিলেন। এমনকি এই মর্মে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে সমস্ত স্কুল-কলেজে নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকা মেনে চলার কোনও চিত্রই এদিন দেখা গেল না মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে। এই চিত্র দেখে ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে দুটি কারণে। প্রথমত একজন চিকিৎসক হিসেবে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির সঙ্গে এটা মোটেও খাপ খাচ্ছে না। এখনও করোনা অতিমারী শেষ হয়ে গিয়েছে, এমনটা নয়। রাজ্যে সংক্রমণ কমলেও প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। আমরা চিকিৎসকরাও বিভ্রান্ত যে এত কম সংক্রমণেও এত মৃত্যু হচ্ছে কেন! সেইরকম একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের রাজ্যে এখনও করোনার বিধি নিষেধ জারি আছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানে এই ধরণের জমায়েত ও উচ্ছ্বাস করোনার সংক্রমণ বাড়ানোর আশঙ্কা থাকবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। চিকিৎসক হিসেবে বিষয়টা যথেষ্ট চিন্তার। এই জমায়েত না করলেই ভালো হতো। যেখানে কারোনা সংক্রমণ এখনও চলছে। তাই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের আবেদন, তোমরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস করো। কিন্তু অন্যরা যেন এর জন্য সমস্যায় না পড়ে সেটাও দেখতে হবে।’ পাশাপাশি চিকিৎসক মানস গুমটা প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। তারা কিছু ক্ষেত্রে অতি সক্রিয় আবার কিছু ক্ষেত্রে একদম সক্রিয় নয়। চোখ বন্ধ করে রয়েছে। করোনার সময় আমরা প্রশাসনের কাছেও অসংখ্যবার আবেদন করেছি, কড়া হাতে গণজমায়েত গুলো বন্ধ করার জন্য। তাই প্রশাসনকেও নজর রাখতে হবে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আতঙ্ক আছে। চতুর্থ, পঞ্চম ঢেউ আসতেই পারে।
ভাইরাস রূপ বদলে আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। যেখানে কোনও কিছুই সুনিশ্চিত নয়, সেখানে এই ধরণের গণজমায়েত না করলেই ভালো হতো।’ তবে স্কুল-কলেজ খোলায় সংক্রমণ বাড়বে তেমনটা মানতে রাজি নন তিনি। বলেছেন, ‘স্কুল, কলেজ খোলার সঙ্গে সংক্রমণ বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা চিকিৎসকরাও দাবি করেছি, স্কুল-কলেজ গত দু’বছর ধরে বন্ধ থাকায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। স্কুল-কলেজ গুলোতে করোনার বিধি-নিষেধ মেনে চলার জন্য শিক্ষক, শিক্ষিকা, অধ্যক্ষ, অধ্যাপকদের আরও দায়িত্ববান হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। এটা হয়তো একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই আমার মনে হয়। সব জায়গায় একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। তাই এই ঘটনা থেকে স্কুল-কলেজ আবার বন্ধের দাবি করলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে এটা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিলেই হবে না। কারণ তারা দু’বছর পর স্কুলে যেতে পেরেছে। ফলে তাদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকবেই। বিশেষ করে সেটা যদি সরস্বতী পুজোর মতো একটা উৎসব হয়। কিন্তু এর দায় প্রশাসনেরও আছে। তাদের সকলকে সতর্ক করা উচিত।…