বাংলার খবর
Saline Controversy: চার মাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হার মানলেন কেশপুরের নাসরিন

চার মাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হার মানলেন কেশপুরের নাসরিন খাতুন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে জন্ম দিয়েছিলেন এক কন্যাসন্তানের। কিন্তু মেয়েকে একবার ছুঁয়ে দেখার সুযোগও পেলেন না। অভিযোগ, মেয়াদউত্তীর্ণ রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ফলত, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি—শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ চিকিৎসার পর এসএসকেএম হাসপাতালেই রবিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
নাসরিন খাতুন, বয়স মাত্র ২০, বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের ন্যাড়াদেউল গ্রামে। গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এরপরই জানা যায়, একই হাসপাতালে ছয়জন প্রসূতি রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন নেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ১০ জানুয়ারি মৃত্যু হয় এক প্রসূতি মামণি রুইদাসের। বাকি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়, যাঁদের কলকাতার এসএসকেএমে আনা হয় গ্রিন করিডরের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন – প্রতিদিন বসছে হাট, ধ্বংসের পথে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি বন
নাসরিন ছিলেন তাঁদেরই একজন। প্রায় চার মাস ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে চলছিল চিকিৎসা। ৯ মে ডায়ালিসিসের পর অবস্থার অবনতি হয়। শেষপর্যন্ত ১২ মে রাতে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
নাসরিনের শাশুড়ি রোশেনারা বিবির কণ্ঠে দুঃখ:
“ওর কিডনি কাজ করছিল না, হার্ট কাজ করছিল না, মাথাতেও রক্ত জমেছিল। মনে করেছিলাম সুস্থ হচ্ছে। কিন্তু আর ফেরেনি।”
ঘটনার জেরে রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। মেয়াদউত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহে গাফিলতি—সবকিছুকে ঘিরে উঠেছিল বহু প্রশ্ন। স্বাস্থ্য দফতর ১৩ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করে, যার মধ্যে ছিলেন ৭ জন জুনিয়র ডাক্তারও।
তবে এতদিন পরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, ন্যায়বিচার কবে? নাসরিনের মামা শেখ আজিদ আলি বলেন,
“আজও আমরা জানি না আসল কারণ কী। সব চাপা পড়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে নজর দিন, যাতে এমন আর না হয়। একে একে সবাই হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমরা? আমাদের তো কেউ নেই আর।”
অন্যদিকে, একই ঘটনায় অসুস্থ আরও দুই প্রসূতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু ফিরতে পারলেন না নাসরিন—এক নতুন মায়ের স্বপ্ন, ভালোবাসা, জীবন থেমে গেল হাসপাতালের বিছানায়।