বাংলার খবর
খুনের চেষ্টার অভিযোগে ত্রিপুরায় গ্রেফতার সায়নী ঘোষ
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নি ঘোষকে গ্রেফতার করল ত্রিপুরা পুলিশ। আজ বিকালেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারার চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন বিশ্বজিৎ দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি।
তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। তৃণমূল যুবর সভানেত্রীর বিরুদ্ধে ১২০ বি, ৫০৬, ১৫৩ এবং ৩০৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ আগরতলার এক বেসরকারি হোটেলে পৌঁছায় ত্রিপুরার মহিলা পুলিশের এক বিশাল বাহিনী। সেখানেই ছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, সাংসদ সুস্মিতা দেব, সায়নী ঘোষ সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিশের কাছে তাঁরা জানতে চান কী কারণে তাঁরা এসেছেন। পুলিশ আধিকারিকরা জানান সায়নী ঘোষকে একবার থানায় যেতে হবে, তাঁর সঙ্গে কিছু কথা বলার আছে পুলিশের। তারপরই সায়নীকে নিয়ে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় যান কুনাল ঘোষ, সুস্মিতা দেব, অর্পিতা ঘোষরা।
সেখানে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরই বিকেল নাগাদ সায়নীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারির পর সায়নী জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে লড়াই করাটা বিজেপির সিলেবাসে কোনদিনও ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। ক্ষমতার দম্ভে, প্রশাসন ও গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহার করে, ভয় দেখিয়ে ভারতবর্ষের মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। গণতন্ত্রকে এভাবে ভুলুণ্ঠিত হতে তৃণমূলের সৈনিকরা দেবে না।’ সায়নীর বিরুদ্ধে যে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সূত্রপাত শনিবার। শনিবার ত্রিপুরার চৌমহনি এলাকায় বিজেপির এক সভার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সায়নী। বিজেপি এবং অভিযোগকারী ওই ব্যক্তির দাবি, সেই সময় বিপ্লব দেব সরকারের উদ্দেশ্যে তৃণমূল যুব নেত্রী বলেছিলেন, ‘ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাতে গুনে ৫০ জন লোক। এর থেকে বেশি আমাদের প্রার্থীদের সভায় ভিড় হচ্ছে।’ সূত্রের খবর, এরপরই সেখানে উপস্থিত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বচসা শুরু হয়। তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে জোরে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সায়নী।
তখনই কয়েকজন জখম হয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। সায়নীকে গ্রেফতার করার পর থেকে থানাতেই রয়েছেন কুণাল ঘোষ, অর্পিতা ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা। সায়নীকে না ছাড়া পর্যন্ত তাঁরা থানাতেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে থানায় ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সুস্মিতা দেব দাবি করেছেন, থানার বাইরে লাঠি হাতে, হেলমেট পরে জমায়েত করে বিজেপি কর্মীরা। সায়নী থানায় ঢুকতেই আক্রমণ করেন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের থানায় ডেকে এনে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। গোটা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘বিপ্লব দেব এতই নির্লজ্জ যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকেও পাত্তা দিচ্ছেন না। বিপ্লব বার বার তৃণমূল সমর্থক এবং মহিলা প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বদলে তাঁদের উপর হামলা চালাতে গুন্ডা পাঠাচ্ছেন।
বিজেপির শাসনে গণতন্ত্রে প্রহসনে পরিণত হয়েছে।’ সোমবারই ত্রিপুরা যাওয়ার কথা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই ঘটনার পর শোনা যাচ্ছে রবিবার রাতেই ত্রিপুরা রওনা দিতে পারেন অভিষেক। এদিকে সোমবারই দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, ত্রিপুরা ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দ্বারস্থ হতে পারেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন তাঁরা। সোমবার দিল্লিতে তৃণমূলের সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকেই ত্রিপুরা ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সময় চাওয়া হবে রাষ্ট্রপতির কাছেও।