বড়তলা-মানিকতলায় অপরাজিত থাকলেও জীবনের লড়াইয়ে হার মানলেন, প্রয়াত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে
Connect with us

বাংলার খবর

বড়তলা-মানিকতলায় অপরাজিত থাকলেও জীবনের লড়াইয়ে হার মানলেন, প্রয়াত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আরও একজন পুরনো সঙ্গীকে হারালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রবীণ তৃণমূল নেতা সাধন পাণ্ডে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে জানিয়েছেন রবিবার সকাল ১০ টা ৩৫ মিনিট নাগাদ মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।

আজ বিকালেই তাঁর দেহ মুম্বই থেকে কলকাতায় আনা হবে। বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং শশী পাঁজা। আজ অর্থাৎ রবিবার তাঁর দেহ রাখা থাকবে পিস ওয়ার্ল্ডে। সোমবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে কীভাবে কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রয়াত সাধন পাণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্যের সমস্ত সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। বছর দশেক আগে একবার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তারপর থেকে একটু সুস্থ্য ছিলেন তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের মাঝেও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখনও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। যদিও কিছু দিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মানিকতলা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে কুড়ি হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে জয়ী হন। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভায় জোড়া মন্ত্রকের দায়িত্ব পান।

গত ১৬ জুলাই ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হন এবং তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। তখন থেকেই তিনি ছিলেন সজ্ঞাহীন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে।রবিবার সকালে তাঁর দীর্ঘ অসুস্থতার লড়াই শেষ হয়ে গেল। তৃনমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর যে কয়েকজন নেতা কখনও তৃনমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দোপাধায়কে ছেড়ে যাননি তাঁদের মধ্যে অন্যতম সাধন পাণ্ডে। রাজ্যের একজন গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সামলেছেন একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের পাশাপাশি রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং স্বনিযুক্ত দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর তাঁর মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।

Advertisement

কিন্তু তিনিও আচমকাই প্রয়াত হন। তারপর থেকে সাধন পাণ্ডেকে দফতরহীন মন্ত্রী রেখে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটে কখনও পরাজিত হননি সাধণ পাণ্ডে। টানা ৯ বারের বিধায়ক তিনি। একমাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়া রাজ্যে আর কারও এই রেকর্ড নেই। ১৯৮৫ সালের উপনির্বাচনে উত্তর কলকাতার বড়তলা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। এরপর ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওই কেন্দ্রেরই কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর একদা রাজনৈতিক গুরু অজিত পাঁজা কলকাতা উত্তর-পূর্ব কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাধন পাণ্ডে। নির্বাচনে তাঁর শোচনীয় পরাজয় হয়। এরপরই ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সাধন পাণ্ডে। ২০০১ এবং ২০০৬ সালে বড়তলা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি।

আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে ২০০৯ সালে বড়তলা কেন্দ্রের অবলুপ্তি হলে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মানিকতলা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেন। ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রীসভার ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী হন তিনি। এরপর ২০১৬ ও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনেও মানিকতলা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে একই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। রাজ্য রাজনীতির এক বর্ণময় এবং বিতর্কিত চরিত্র ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রকাশ্যেই তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল বিরোধী মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। দলের সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

পরে যদিও সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সমস্ত বিতর্ক দূরে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ মুম্বইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। সাধন পাণ্ডে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কলকাতার বড়তলা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি মানিকতলা কেন্দ্রের বিধায়ক। বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী সাধনদার সঙ্গে আমার অত্যন্ত হৃদ্য সম্পর্ক ছিল। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি আমার অগ্রজকে হারালাম। আমি সাধন পাণ্ডের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

Advertisement
Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.