বাংলার খবর
কেকে-কে নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রূপঙ্কর, ডিলিট করলেন পোস্ট
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত তিন দিন ধরে তাঁকে ঘিরে চলা চরম বিতর্কের মধ্যে মুখ বন্ধই রেখে ছিলেন। অবশেষে প্রকাশ্যে এসে কেকে কে নিয়ে করা তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইলেন সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। তবে এদিনও নিজের হয়ে সাফাই গাইতে গিয়ে রুপঙ্কর বলেছেন, তাঁর করা সম্পূর্ণ মন্তব্যটিকে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কোনোভাবেই কেকে-কে অপমান করতে চাননি। তিনি বাঙালি গায়কদের হয়ে তাদের অস্তিত্বরক্ষায় একটি সমষ্টিগত আওয়াজ তুলতে চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কেকে-কে নিয়ে করা তাঁর বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টটিও তিনি ডিলিট করে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে কলকাতা প্রেস ক্লাবে স্ত্রী চৈতালির সঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে রূপঙ্কর বলেছেন, ‘প্রথমেই প্রয়াত কেকে-র পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার যে ভিডিওটি গত ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে এত বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান হয়েছে, এখানে পৌঁছাবার আগে সেটি আমি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম। পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে মুম্বইবাসী__তাঁদের আবার জানাচ্ছি যে আমি আন্তরিক দুঃখিত। কেকে আজ যেখানেই থাকুন, ঈশ্বর যেন ওকে শান্তিতে রাখেন।’
উল্লেখ্য, শহরের তিনটি কলেজের ফেস্টে গান গাইতে গত সোমবার কলকাতায় এসেছিলেন বলিউডের প্রখ্যাত গায়ক কেকে। সোমবার কেকের অনুষ্ঠানের পরই রুপঙ্কর ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘হু ইজ কেকে? কে এই কেকে?’ তার পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে গুরুদাস কলেজের ফেস্টে গান গেয়ে হোটেলে ফেরার পরই অসুস্থবোধ করেন বলিউডের গায়ক। তারপরই তাঁকে তড়িঘড়ি সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই সহশিল্পী-সহ রাজ্য তথা দেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের আক্রোশ গিয়ে পড়ে রুপঙ্করের ওপর। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে প্রকাশ্যেই রুপঙ্করকে তীব্র আক্রমণ করেন সঙ্গীতপ্রেমীরা। এমনকি তাঁকে খুন করার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী। থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। তারপরই রুপঙ্করের নিরাপত্তায় তাঁর বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে রূপঙ্কর বলেছেন, ‘আমর সঙ্গীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। যেখানে ওড়িশায় বসে করা একটা ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক, দুর্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিশ। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রী-র ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশ-বিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের আবেগ অনুভব করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানান স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানতো? এত ঘৃণা, এত আক্রোশ, এত বিরুদ্ধতা– কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিক মতো গুছিয়ে বলতে না পারার।’
বাঙালি গায়কদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তিনি সেদিন ওই মন্তব্য করেছিলেন বলেও এদিন জানিয়েছেন রুপঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একই রকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত যেভাবে তার শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প, সাহিত্য, সংগীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি। একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম। একইসঙ্গে তাই আরও কিছু সমযোদ্ধার নাম করেছিলাম যাদের ট্যালেন্ট আমার মতে জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি একক ভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে-এর মতো ভারত বিখ্যাত পারফরমারের নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ্য। লক্ষ্য কখনও তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই। কে জানত, চরম দুর্ভাগ্য কেকে-র জন্য এইভাবে ওঁৎ পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয় বিদারক।’
তবে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের কথাগুলো বলেই চলে যান রূপঙ্কর। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাননি তিনি।কার্যত তিনি এড়িয়ে গেলেন বলাই ভালো। এ প্রসঙ্গে রুপঙ্কর বলেছেন, ‘আমি আজ আপনাদের কারও সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছি না। পরে নিশ্চয়ই বলবো। কিন্তু আজ সেই দিন নয়। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি আগাম।’