বাংলার খবর
চায়ের দোকান চালিয়ে মেডিক্যালে সুযোগ পেলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের রিন্টু!

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : কথায় বলে মনের ইচ্ছা থাকলে কোনও প্রতিবন্ধকতাই স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারে না। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরের রিন্টু মালি, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। রিন্টুর জীবন সগ্রামের যাত্রাটা শুরু জাতীয় সড়কের পাশে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান থেকেই। যেখানে কোনও রকমে দু’বেলা খাওয়ার জোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা পরিবারের, সেই পরিস্থিতিতেও স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি রিন্টুর।
সকলের মতোই রিন্টুও স্বপ্ন দেখতেন একদিন বড় হয়ে তিনিও বাবা-মার দুঃখ কষ্ট দূর করবেন। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও অধ্যবসায় এবং মনের জেদ নিয়ে এগিয়ে চলা রিন্টু গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ আসে। এযেন চরম দরিদ্রতার মাঝেও স্বপ্ন পূরণের এক গল্প। ছেলের সাফল্যে আপ্লুত রিন্টু মন্ডলের মা মীরা মন্ডল মালি। তিনি বলেছেন, ‘ছোটো থেকেই আমারও ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করব। যদিও অভাবের সংসারে করে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই ছেলেকে ছোট থেকেই শেখাতাম জীবনে এমন কিছু কর, যেখান থেকে মানুষের সেবা করতে পারবি। আজ ও মেডিক্যালে সুযোগ পেয়েছে। আমি অত্যন্ত খুশি।’ বুনিয়াদপুরে জাতীয় সড়কের পাশেই সরকারি জায়গায় বহু বছর ধরেই বাসবাস করছিলেন রিন্টু ও তাঁর পরিবার। কিন্তু ২০২০ সালে রাজনৈতিক সভার জন্য তড়িঘড়ি পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদেঁর সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পরীক্ষার আগে মেধাবী ছাত্রটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তবে মাথার উপরে ছাদ না থাকলেও জীবনের সংগ্রাম থেমে থাকেনি রিন্টুর। বুনিয়াদপুর হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা কেয়া সরকার-সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পাশে দাঁড়ান সেই সময়। এছাড়াও এলাকার সহৃদয় মানুষজনদের সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন রিন্টু। কঠিন এই জীবন সংগ্রামের মাঝেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিনামূল্যে তাঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করে গিয়েছেন। রেল লাইনের ধারে খুব কষ্টে এক চিলতে টিনের ঘরই বর্তমান ঠিকানা রিন্টুর পরিবারের। জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাত স্বচক্ষে দেখেছেন রিন্টু। কিন্তু হার মানেননি। পড়াশোনা করতে চাইলে দরিদ্রতা কখনওই বাধা হতে পারে না- এমনটাই মনে করেন রিন্টু। দক্ষিণ দিনাজপুরের রিন্টু এখন জেলার হাজার-হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জীবনে বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা।