পাঁচ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি, তবুও প্রতিদিন সবজি বেচেন তৃণমূল কাউন্সিলর
Connect with us

বাংলার খবর

পাঁচ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি, তবুও প্রতিদিন সবজি বেচেন তৃণমূল কাউন্সিলর

Raju Dhara

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: রাজ্য তথা দেশের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে হামেশাই আয় বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগ ওঠে। সেখানে ব্যতিক্রম দুর্গাপুজোর তৃণমূল কাউন্সিলর শিপুল সাহা। প্রতিদিন সকালে হলেই সবজি নিয়ে বাজারে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে চিৎকার করে সবজি বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন সকালে দুর্গাপুরের সেন মার্কেটে গেলে এভাবেই সবজি বিক্রি করতে দেখা যায় দুর্গাপুর পৌরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শিপুল সাহাকে।

কাউন্সিলর হয়ে গেলেও তিনি এখনও নিজের পূর্ব পেশাকে ছাড়েননি। প্রতিদিন ভোর হলেই নিয়ম করে বাজারে সবজি বিক্রি করতে চলে যান। বাজারে গিয়ে বাকি বিক্রেতাদের সঙ্গে বসে গলায় গামছা জড়িয়ে চিৎকার করে সবজি বিক্রি করেন। তাই জনপ্রতিনিধি হলেও এখনও তিনি নিজেকে সবজি বিক্রেতা হিসেবেই পরিচয় দেন। বেচাকেনা শেষ করে নিজের কার্যালয়ে যান এবং সেখানে বসেই এলাকার মানুষের সমস্যা, অসুবিধার কথা শোনেন এবং তাঁদের পরিষেবা দেন। তারপর দুপুরে ওয়ার্ডের কাজকর্ম নিয়ে যান পৌরসভায়। বিকেল হলেই এলাকায় বেরিয়ে পড়েন। বাসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে তাদের সমস্যার কথা শোনেন। সন্ধ্যায় আবারও নিজের কার্যালয়ে এসে বসেন। সেখানে বসেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পাশাপাশি ওয়ার্ডবাসীদের সমস্যার কথা শোনেন এবং তা সমাধান করার চেষ্টা করেন।

কাউন্সিলরের কাজে খুশি দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিপুল সাহা উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা। তাঁর বাবা জহর সাহা শস্য ডাল মিলে চাকরি করতেন। সংসারের হাল ধরতে আট বছর বয়স থেকেই শিপুল সাহা হাবড়া স্টেশনে শশা বিক্রি করতেন। এরপর ১৯৮২ সালে শিপুলবাবুর বাবা কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে চলে আসেন। ১৯৮৪ সাল থেকে জহর সাহা দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে ফল বিক্রি করতেন। এবং ওই ওয়ার্ডের শ্রমিক নগরে পরিবারকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন জহরবাবু। আর্থিক অনটনের কারণে মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৯৫ সাল থেকে দুর্গাপুর সেন মার্কেটে সবজি বিক্রি শুরু করেন শিপুল সাহা। বর্তমানে শিপুলবাবু তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। তাঁর বড় মেয়ে বারাসতের এক কলেজের সাইকোলজির ছাত্রী। আর ছেলে স্কুলে পড়ে।

Advertisement

শিপুল বাবু বলছিলেন, ‘সবজি বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিক নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য হয়ে টুকটাক সামাজিক কাজকর্ম করতাম। এরপর ১৯৯২ সালে কংগ্রেসের সদস্য হই। তখন থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। এরপর ১৯৯৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলে আমি তৃণমূলে যোগ দিই। প্রথমে বুথ তারপরে ওয়ার্ড সভাপতি হই। ২০১৭ সালে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস, নির্দলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১ হাজার ৩০০ ভোটে জিতে প্রথমবার কাউন্সিলর হই। কাউন্সিলর হওয়ার পর প্রথমে ৬ হাজার ৭০০ টাকা মাসিক ভাতা পেতাম। বর্তমানে ৯ হাজার ৮০০ টাকা ভাতা পাই। কিন্তু সেই টাকায় সংসার চলে না। দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ রয়েছে। তাই এখনও সবজি বিক্রি করি। তারপর জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাজ করি। এই সবজি বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। তাই এই পেশা আমি ছাড়তে পারব না। এই পেশা আমার কাছে অনেক বড়। তাই আগামী দিনেও আমি সবজি বিক্রি করে যাব।’

এলাকাবাসীরা বলছিলেন, ‘শিপুল সাহা কাউন্সিলর হিসেবে এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। কাউন্সিলর হওয়ার পরও ও নিজেকে বদলায়নি। ওর কথাবার্তা, চালচলন, ব্যবহার আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। এখনও প্রতিদিন নিয়ম করে বাজারে বসে সবজি বিক্রি করে। সবাই যদি ওর মতো হত, তাহলে গোটা সমাজটাই বদলে যেতে।’

Advertisement
Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.