বাংলার খবর
দেবশ্রীকে ‘মীরজাফর’ বলে বিজেপি ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান। বিজেপি ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি কৃষ্ণ কল্যাণী। আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। বেশ কয়েকদিন ধরেই রায়গঞ্জের বিধায়ক উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। দেবশ্রী রায়চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিবাদ চরমে উঠেছিল। তারপরই বিভিন্ন দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বৃহস্পতিবার তাঁকে শোকজ করা হয় এবং তিন দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু আজ বিজেপি ছাড়ার কথাই ঘোষণা করে দিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে একই দলে থেকে তাঁর পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর যখন একে একে বিজেপি বিধায়করা তৃণমূলে নাম লেখানো শুরু করেন, তখনই বেসুরো মন্তব্য শোনা গিয়েছিল রায়গঞ্জের বিধায়কের মুখে। তৎকালীন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। জেলা সংগঠনে তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ কমিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলের সমস্ত কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।
জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের বিরুদ্ধেও একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। এমনকি তারমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লিও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। দিল্লি থেকে ফিরেই রায়গঞ্জে নিজের কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি দেওয়া সাইনবোর্ড ও পতাকা খুলে ফেলতেই তাঁর বিজেপি ছাড়ার জল্পনা আরও জোরালো হয়েছিল। আজ সেটাই বাস্তব হল। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষ্ণ কল্যাণী রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, ‘সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী এলাকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছেন। তিনি আবার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। মীরজাফরের মতো পেছন থেকে আমার পিঠে ছুড়ি মারবে আমি সেটা মেনে নেব না। তাই তিনি যে দলে, সেই দলে আমি থাকতে পারি না। আমার যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে সেগুলো আমি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। এবং তাদের আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সেই সময়সীমা গত কালই শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
তাই আমি আজ বিজেপি ছাড়লাম। আমি পিঠ দেখিয়ে দল থেকে বেড়চ্ছি না। সবাইকে বলে ছাড়লাম। আমার বিরুদ্ধে যদি ওরা কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমিও আইনি পথেই তার জবাব দেব। আমি ছেড়ে দেওয়ায় দলের ক্ষতি হবে। কিন্তু দেবশ্রী চৌধুরীর মতো মীরজাফর দলে থাকলে আমার ছেড়ে দেওয়ার থেকেও উনার দলে থাকাটা বেশি ক্ষতিকর।’ শুধু তাই নয়, রায়গঞ্জের সাংসদকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘এরপরের লোকসভা নির্বাচনে দেবশ্রী চৌধুরী বিজেপির টিকিট পাবেন কিনা জানি না। যদি পান, আমি কথা দিলাম উনার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। না হলে আমি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে নেব। তাই উনি যেখানে আছেন আমি সেখান থেকে সরে যাচ্ছি। আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি,পরিষেবা দিয়েছি। আমি কাজ করেও বহিষ্কার। আর উনি কোনও কাজ না করেই পেলেন পুরস্কার। তাহলে আমি আর থেকে কী করব।’ বৃহস্পতিবার রাতেই রায়গঞ্জে গিয়েছেন সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী।
দীর্ঘক্ষণ সেখানে জেলা নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই কৃষ্ণ কল্যাণীকে শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির সভাপতি বাসুদেব সরকার জানান, দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বৃহস্পতিবার শোকজের নোটিস পাঠানো হয় বিধায়ককে। যদিও আজ কৃষ্ণ কল্যাণী দাবি করেছেন চিঠি দিয়ে বা মেইল করে তাঁকে কোনও শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়নি। একটি অজানা মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ করে তাঁকে শোকজ করার কথা জানানো হয়েছে। শোকজের সত্যতা যাচাই করতে তিনি জেলা সভাপতিকে ফোন করলেও, তিনি তার কোনও জবাব দেননি বলেও অভিযোগ করেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী।
এই নিয়েও আজ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। তিনি বলেছেন, দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেও দলীয় নেতৃত্বকে শোকজের উপযুক্ত জবাব তিনি দেবেন। আজ বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেও কোন দলে যোগ দিচ্ছেন, তা পরিষ্কার করে না জানিয়ে সেই জল্পনা জিইয়ে রাখলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। শোনা যাচ্ছে তিনিও দুই-একদিনের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমি কোনও দলে নেই। আমাকে এই নিয়ে এখন ভাবনা চিন্তা করতে হবে। তারপরে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এবং সঠিক সময়ে সেই সিদ্ধান্তের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবো।