বাংলার খবর
জল্পনার অবসান, তৃণমূলে যোগ দিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী
বেঙ্গল এক্সপ্রেস, কলকাতা : রাজ্যে বিজেপির ‘রক্তক্ষরণ’ অব্যাহত। আর দু’দিন পরেই রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। তার আগেই বড় ধাক্কা খেলো রাজ্যের পদ্ম শিবির। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী।
আজ, বুধবার কলকাতায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে রায়গঞ্জ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে রায়গঞ্জের বিধায়কের বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছিল। রায়গঞ্জের দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মারাত্মক অভিযোগ তুলে কৃষ্ণ কল্যাণী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে একই দলে থেকে কাজ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়, একুশের নির্বাচনে দেবশ্রী চৌধুরী তাঁকে হারানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। এরপরই প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে শোকজ করে বিজেপি। এবং তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। সেই উত্তর না দিয়েই, জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব এবং দেবশ্রী চৌধুরীর উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে গত পয়লা সেপ্টেম্বর বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। তারপরই থেকেই তাঁর তৃণমূলে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছিল জোর জল্পনা। আজ অবশেষে সেটাই বাস্তব হল। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা সমাজসেবী কৃষ্ণ কল্যাণী জানিয়েছেন, বিজেপিতে কাজের পরিবেশ নেই, শুধুই ষড়যন্ত্র চলছে।
এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন সেই কথা রেখেছেন। সেই কারণেই তিনি দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিনও রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কৃষ্ণ কল্যাণী। এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে দেবশ্রী চৌধুরী এবং বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে রায়গঞ্জের বিধায়ক বলেছেন, ‘আমাকে তৃণমূল কংগ্রেসে সামিল করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ দলের সকলকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিজেপিতে ভালো কাজের মূল্যায়ন নেই, ভালো কাজের পরিবেশ নেই। আছে শুধু ষড়যন্ত্র। আর এই ষড়যন্ত্রের অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জেতা যায় না। তার জন্য জনগণের উন্নয়ন, বিকাশের দরকার। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া দরকার। আর সেটা মা-মাটি-মানুষের সরকারের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন।
উদাহরণ হিসেবে আমি রান্নাঘরের কথা বলতে চাই। আমরা সবাই জানি বাড়ির রান্নাঘরের দায়িত্ব সামলান মায়েরা। তাঁদেরকে একটা বাজেট দেওয়া হয়। সেই বাজেটের মধ্যে থেকেই তাঁরা রান্নাবান্নার সামগ্রী কেনেন। তার মধ্যে থেকেও তাঁরা কিছু না কিছু সঞ্চয় করেন। সেটাকে আমরা বলি আঁচলে বাঁধা টাকা। প্রতিদিনই কিছু না কিছু টাকা সঞ্চয় হয়। মাসের শেষে সেই আঁচলে বাঁধা টাকা একটা খুঁটির ব্যাংকে তাঁরা জমা করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিগত কয়েক বছরে নোটবন্দি, জিএসটি-এর মতো জনবিরোধী ফরমান জারি করেছে। রান্নার গ্যাস ও খাবারের দাম এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে সাধারণ মানুষের আঁচলে আর টাকা থাকছে না। খুঁটির ব্যাংক নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আরেকদিকে আমাদের নেত্রী কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষী ভান্ডার-এর মতো প্রকল্প চালিয়ে মা বোনেদের উপহার দিচ্ছেন।
এবং মা-বোনেদের হাতে ও আঁচলে টাকা গুঁজে দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে সবুজসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প দিয়ে ওই নড়বড়ে খুঁটিটাকেও মেরামত করছেন। দেখুন আমি ব্যবসায়ী ক্ষেত্র থেকে এসেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং দায়বদ্ধতাই আমাদের কাছে অলংকার। বিগত দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। উনি যেভাবে নিজের প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন, তা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েই আজ তৃণমূলে যোগ দিলাম।
মা মাটি সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসে আমাকে সামিল করার জন্য আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এরপরই রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে আক্রমণ করে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছিল। রায়গঞ্জে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাকে হারানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমি ভালো কাজ করে গিয়েছি, মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি। বিজেপিতে থাকাকালীন আমি ৬ বড় যোগদান করিয়ে ছিলাম। তারপরও আমি গত মাসে…