গোপনীয়তা রক্ষা করে আজও মালদায় চাষ হচ্ছে দেড়-দুই কিলো ওজনের বেগুন!
Connect with us

Uncategorized

গোপনীয়তা রক্ষা করে আজও মালদায় চাষ হচ্ছে দেড়-দুই কিলো ওজনের বেগুন!

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কোনোটার ওজন এক কিলো তো কোনোটার দেড় কিলো। আবার দুস’কিলো ওজনেরও রয়েছে। দূর থেকে একঝলক দেখে মনে হবে লাউ বা সেই ধরণের অন্য কোনও আনাজ। কিন্তু কাছে গেলে ধারণাটাই পাল্টে যাবে। লাউ কিংবা চালকুমড়ো নয়, এ হল বাঙালির প্রিয় সবজি বেগুন! লাউয়ের মতোই লম্বা ও সবুজ রঙ।

একেকটি ওজনে দেড় থেকে দুই কিলো কিংবা তারও বেশি ৷ চলতি ভাষায় এই বেগুন নবাবগঞ্জের বেগুন নামেই পরিচিত। শীতের মরশুমে এই বেগুনের চাহিদা জেলা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিদেশেও। যদিও এই বেগুন চাষের পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। অনেক আগে মালদহের রতুয়া ২ ব্লকের নাগরি নদীর ধারে কয়লাবাদ গ্রামে এই প্রজাতির বেগুন প্রথম চাষ হয়েছিল। ধীরে ধীরে পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকের কয়েকটি গ্রামে এই বেগুন চাষ ছড়িয়ে পড়ে। ধোপদুরস্ত চেহারার জন্য এই বেগুনকে প্রথমে পলিয়া বেগুন নামেই চিনত সবাই। সেই সময় জেলার প্রধান হাট ছিল পুরাতন মালদার নবাবগঞ্জে ৷ এই হাটেই পাইকাররা আসতেন। ফলে এই বেগুন নিয়ে সেই হাটেই যেত চাষীরা।

এই জন্যই ধীরে ধীরে এই বেগুন, নবাবগঞ্জের বেগুন নামে পরিচিতি পায়। সময় বদলেছে। কিন্তু বেগুনের কদর আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। তবে এখনও এই বেগুনের চাষ বিস্তৃতি পায়নি৷ এর অন্যতম কারণ, এই বেগুনের চাষীরা চাষের কৌশল প্রকাশ করেন না। এমনকি এই বেগুনের বীজও তাঁরা বাইরে বের করেন না। একাধিক বীজ তৈরির সংস্থা এই চাষীদের কাছে বিশেষ বেগুনের বীজ সংগ্রহ করতে গেলেও প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। তবে বর্তমানে কিছু নার্সারি নিজেদের উদ্যোগে এই প্রজাতির বেগুনের চারাগাছ বিক্রি করে। যদিও সেটা নগণ্য। নবাবগঞ্জের বেগুন এখন মালদার একটা ঐতিহ্য হয়েই দাঁড়িয়েছে। চলতি মরশুমে রতুয়া ২ ব্লকের রাজাপুর গ্রামের মাত্র চারজন চাষী এই বেগুন চাষ করেছেন। তাঁদেরই একজন ফটিক শেখ। তিনি জানান, ‘বর্তমানে এই বেগুন আমাদের এখানেই হয়ে থাকে।

Advertisement

এই চাষ সবাই করতে পারবেন না। তবে দীর্ঘদিনের ব্যবহারের পর এই বেগুনের বীজ শোধন করে উন্নতমানের করা প্রয়োজন। এখন প্রতিটি বেগুন দেড় থেকে দুই কিলো ওজনের হয়। আগে একেকটি বেগুনের ওজন অন্তত তিন কিলো হত। কিন্তু ওজন এত হলেও বেগুনে বীজ থাকত না। এখনও দু’কিলো ওজনের বেগুনে কোনও বীজ থাকে না। এই বেগুন এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য এখন খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। তবে এই বেগুন চাষ অত্যন্ত লাভজনক। প্রতি বিঘাতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়৷ আমি ১৬ বছর ধরে এই বেগুনের চাষ করছি। এবছর বেগুনের দাম অনেক বেশি ৷ পাইকারদের কাছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কিলো দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে এই বেগুনের দাম কিলোপ্রতি ১০০ টাকাও হয়ে যায়। এবার অতিবৃষ্টিতে বেশিরভাগ জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷

তাই বেগুনের দাম এত বেশি। এই বেগুন চাষের জন্য বিশেষ কৌশল রয়েছে। তবে তা আমাদের গোপন ব্যাপার।’ ফটিক এই বেগুন চাষের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে না চাইলেও এটুকু নিশ্চিত, নবাবগঞ্জের বেগুন চাষের জন্য পলিমিশ্রিত দোঁয়াশ মাটি প্রয়োজন। সেকারণেই এই প্রজাতির বেগুন চাষের জমিগুলি সবই নদীর ধারে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। বিশেষত গোবর সার এই বেগুন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ৷ জমির চারপাশ এবং উপরের অংশ জাল দিয়ে ঘিরে রাখতে হয়। যাতে কোনও পাখি কিংবা জন্তু জমিতে প্রবেশ করতে না পারে। রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড়ো বিষয়, জমিতে জল দাঁড়াতে দেওয়া চলবে না। জলের পরিমাণ বেশি হলে বেগুন গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। কোন সময় কতটা জলের প্রয়োজন, একজন বিচক্ষণ চাষীই তা সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন।’

Advertisement
Continue Reading
Advertisement
Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.