আন্তর্জাতিক
উদ্বোধন হল পদ্মা সেতুর, টোল ফি দিয়ে প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। শনিবার উদ্বোধন হল বাংলাদেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এদিন সকাল ৯.৫৫ নাগাদ মাওয়ায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর উদ্বোধন ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের পরই সেখান থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নিজে হাতে টোল দিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে কনভয় নিয়ে পদ্মা সেতুতে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য মন্ত্রীরা-সহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। শেখ হাসিনার সেই টোল ট্যাক্স দেওয়ার ছবি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে দু’হাজার টাকা টোল ফি দিয়েছেন হাসিনা। টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। রবিবার ভোর থেকেই জনসাধারণের জন্য খুলে যাবে এই সেতু।
এদিন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি কাঠামো নয়। এই সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা, আর মর্যাদার প্রতীক। এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।’ যারা এই সেতু নির্মাণে বাধা দিয়েছিল, সেই খালেদা জিয়া সহ বিরোধীদেরও এদিন কটাক্ষ করেছেন হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতু নির্মাণের কাজে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবেই আমরা ভেঙ্গে পরিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নকে সত্যি করে অবশেষে আমরা বিজয়ী হয়েছি। খালেদা জিয়া বলেছিলেন আমরা এই সেতু নির্মাণ করতে পারব না। খালেদা জিয়া আসুন, দেখে যান আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনও রকম ধ্বস নামেনি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের মর্যাদা পাবে। আমরা প্রমাণ করেছি যে আমরাও পারি। তাই পদ্মা সেতু শুধু বাঙালীর আত্মমর্যাদা বা সক্ষমতা প্রমাণের সেতু নয়। সমগ্র জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধ।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যেও দূরত্ব কমবে। এবং অর্থনীতিও আরও চাঙ্গা হবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই দোতলা পদ্মা সেতুর উপরের তলা দিয়ে চলবে বাস সহ অন্যান্য যানবাহন। আর নিচের তলায় রয়েছে রেল লাইন। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন দফতর জানিয়েছে, এই সেতু পার হওয়ার জন্য মোটরসাইকেলের ১০০ টাকা, ছোট গাড়ি বা জিপের ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানের ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের ১৩০০ টাকা, মিনিবাসের ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসের ২ হাজার টাকা, বড় বাসের ২৪০০ টাকা টোল ট্যাক্স লাগবে। এ ছাড়াও ৫ টন পর্যন্ত ট্রাকের ১৬০০ টাকা, ৫-৮ টনের ট্রাকের ২১০০টাকা, ৮-১১টন ট্রাকের ২৮০০ টাকা টোল লাগবে। চার এক্সেল ট্রলারের ক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকা এবং এর বড় মাপের ট্রলারের ক্ষেত্রে প্রতি এক্সেলে ১৫০০ টাকা করে টোল লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন দফতর আরও জানিয়েছে, সেতুর দুই প্রান্তে ১৪ ইলেকট্রনিক্স টোল কালেকশন বুথ বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল আদায় করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন কার্ড গাড়িতে থাকলে টোল বুথে থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট টাকা কেটে নেওয়া হবে। মাত্র তিন সেকেন্ডে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে, আপাতত দুটি গেটে এই সিস্টেম বসানো হয়েছে। বাকি ১২ গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল নেওয়া হবে। পরে এই গেট গুলোতেও এই সিস্টেম বসানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজী মহম্মদ ফেরদৌস।