দেশের খবর
গঙ্গায় ডুব দিয়ে সূর্য প্রণাম করে, পুজো দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: নিজের সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসীতে দু’দিনের সফরে এসে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডরের’ উদ্বোধন করলেন। এ দিন দুপুর ১২টায় বারাণসী পৌঁছনোর কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি সময়ের এক ঘণ্টা আগেই পৌঁছে যান।
বারাণসীতে পৌঁছেই প্রথমে কালভৈরব মন্দিরে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পুজো দিয়ে তিনি আরতিও করেন। এরপর খিড়কিয়া ঘাট থেকে গঙ্গাবক্ষে প্রমোদতরীতে চেপে ললিত ঘাটে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে নদীর ধারে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। হাত নেড়ে তাঁদের অভিবাদন জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর ললিত ঘাটে নদীতে ডুব দিয়ে স্নান করে, সূর্য প্রণাম করার পাশাপাশি গঙ্গা পুজো করেন প্রধানমন্ত্রী। গঙ্গা থেকে জল নিয়ে বিশ্বনাথ মন্দিরে ষোড়শ উপাচারে পুজো দেন। গঙ্গাস্নান সেরেই টুইট করে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘গঙ্গাবক্ষে নেমে মা গঙ্গার স্নেহ পেয়ে নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি।
গঙ্গার ঢেউগুলি মনে হচ্ছিল যেন বিশ্বনাথ ধামকেই আশির্বাদ করছে। হর হর মহাদেব। হর হর গঙ্গে।’ পুজো-পাঠ শেষ করে মন্দির চত্বরেই এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাশী বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কাশী বিশ্বনাথ করিডরে ৪০টি মন্দিরের সংস্কার ও ২৩টি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার পাড় অবধি পাঁচ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে সাজিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই করিডর। ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের শিল্যন্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।এই করিডর তৈরি করতে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকা খরচে হয়েছে। মন্দির সংস্কারের কাজ যারা করেছেন,তাদের সঙ্গেও দেখা করেন এবং মধ্যাহ্ন ভোজন সারেন প্রধানমন্ত্রী। করিডর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কাশীতে এক জনেরই সরকার রয়েছে। যাঁর হাতে ডমরু রয়েছে।
তিনি চেয়েছেন বলেই এই কাজ সম্ভব হয়েছে। আমরা তো কেবল তা বাস্তবে রূপান্তর করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাশী অনেক উত্থানপতনের সাক্ষী থেকেছে। অনেক সুলতান এসেছেন, চলে গিয়েছেন। কিন্তু কাশী রয়ে গিয়েছে। ঔরঙ্গজেবের অত্যাচার ইতিহাস জানে। কিন্তু তাঁর পাল্টা শিবাজিও ছিলেন। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু আমরা সেটা করে দেখাতে পেরেছি। অসম্ভব বলে কিছু নেই। ইচ্ছে থাকলে সবকিছু সম্ভব। আগে গঙ্গার পাশেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ছিল। বাবা বিশ্বনাথকে যখন প্রণাম করা হত, একইসঙ্গে মা গঙ্গার দর্শনও হয়ে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পথের মাঝে অনেক কিছু তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তাই ঐতিহ্য ও আধুনিকীকরণের মিশেলে এই নতুন করিডর তৈরি করা হয়েছে। আমি যখন বারাণসীতে এসেছিলাম, তখন মানুষের উপরই আস্থা রেখেছিলাম। নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েও উন্নয়নের কাজ থেমে থাকেনি। করোনাকালেও করিডর তৈরির কাজ হয়েছে।
সেই কারণে আমি নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা শ্রমিকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। মনে রাখবেন বিনাশকারীর শক্তি কখনওই ভক্তি ও শক্তির থেকে বড় হতে পারে না। আমরা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেদের দেখব, বিশ্বও সেই নজরেই আমাদের দেখবে। দীর্ঘ সময় ধরে পরাধীন থাকার ফলে আমাদের মনোবলেও যে প্রভাব পড়েছিল, তা কাটিয়ে উঠছে ভারতবাসী। আজ ভারত কেবল সোমনাথ মন্দিরের সৌন্দর্য্যের কাজই করছে না, একইসঙ্গে সমুদ্রের নীচে হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবারও বসাচ্ছে। আজকের ভারত কেবল কেদারনাথ মন্দিরের সংস্কারই করছে না, নিজের ক্ষমতায় মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
কেবল অযোধ্যায় রাম মন্দিরই তৈরি হচ্ছে না, একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজও তৈরি করা হচ্ছে। নতুন ভারতে সংস্কৃতির গর্ব যেমন আছে, তেমনই নিজের ক্ষমতায় কাজ করার গর্বও রয়েছে। আমার কাছে জনতা জনার্দনই ঈশ্বর। আমি মনে করি সকল ভারতবাসীর মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন। সকলেই ঈশ্বরের কাছে কিছু না কিছু চান, তাই আমিও আপনাদের কাছে তিনটি সংকল্প চাইছি। প্রথম, স্বচ্ছতা। দ্বিতীয়, সৃজন ও তৃতীয়, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য নিরন্তর প্রয়াস। স্বচ্ছতাকে জীবনশৈলী বানিয়ে নিতে হবে আমাদের। গঙ্গা নদীর সাফাইয়ের জন্য উত্তরাখণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ অবধি নানা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আপনাদের মিলিত উদ্যোগেই নমামি গঙ্গের প্রকল্প সফল হয়েছে। আপনাদেরই এর সাফল্য বজায় রাখতে হবে। কাশী বিশ্বনাথ ধামের নতুন কমপ্লেক্সটি কেবল একটি বিশাল ভবন নয়, বরং ভারতের “সনাতন সংস্কৃতি আমাদের আধ্যাত্মিকতা এবং ভারতের প্রাচীনতা ও ঐতিহ্যের প্রতীক। মন্দির সংলগ্ন এলাকা আগে ছিল…