মন্ত্রিত্বের পর এবার দলের সমস্ত পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে
Connect with us

বাংলার খবর

মন্ত্রিত্বের পর এবার দলের সমস্ত পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ:  দুপুরেই গিয়েছিল মন্ত্রীত্ব। এবার বিকালে দলের সমস্ত পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সঙ্গে যতদিন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পক্রিয়া ও তদন্ত চলবে এবং যতদিন না তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হচ্ছেন, ততদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হল। বৃহস্পতিবার দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের মহাসচিব, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি, দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য এবং ওর্য়াকিং কমিটির সদস্য, এই সমস্ত পদ থেকেই অপসারিত করা হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। গত কয়েকদিনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই ফ্ল্যাট থেকে যে বিপুল পরিমান কালো টাকা, গহনা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে, তার উৎস কী, তা খুঁজে বার করারও দাবী জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্ষদীয়- এই তিন মন্ত্রক থেকেই সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল দলের সমস্ত পথ থেকেও অপসারিত করা হতে পারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার বিকালে তৃণমূল ভবনে দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পর বিকালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে কি জানান সেই দিকেই নজর ছিল গোটা রাজ্য-সহ দেশের। অবশেষে সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি দলের ৫ পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অভিষেক।
বৃহস্পতিবার বিকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে অপসারিত করার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতির সঙ্গে কোনও রকম আপস করে না। সে যত বড়ই নেতা-মন্ত্রী হোক, বিধায়ক হোক বা সাংসদ হোক। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের দল। জনগণের দল। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের স্বার্থে আন্দোলন করে তিল তিল করে এই তৃণমূল কংগ্রেস দলটা তৈরি করেছেন। মানুষের জন্যই তৈরি হয়েছে এই তৃণমূল কংগ্রেস। তাই সরকার আসবে সরকার যাবে। নেতৃত্বের বদল হবে। তাই মানুষ ও সরকারের মধ্যে যে বিশ্বাস একবার তৈরি হয়, সেই মানুষের সঙ্গে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ এখনও পর্যন্ত হাতে এসেছে তার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির এই বৈঠকে উপস্থিত সকলেই তাঁদের নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। তদন্ত যতদিন না শেষ হবে, ততদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় দল থেকে সাসপেন্ড থাকবেন। এবং দলের সমস্ত পদ থেকেও তাঁকে অপসারিত করা হচ্ছে। উনি আইনের চোখে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে পারলে তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সর্বসম্মতিক্রমেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘যে সমস্ত ছবি জনসমক্ষে এসেছে, তা খুবই অস্বস্তিকর। কিন্তু যত বড়ই নেতা হন, তাঁর যতই জনসমর্থন থাকুক, মানুষের সঙ্গে অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। আমরা কাউকে আড়াল করব না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অন্যায় হলে কোনও আপস করে না তৃণমূল। যদি কেউ অন্যায় করেছেন বলে প্রমাণিত হয়, তৃণমূল তাঁকে ছেড়ে দেবে না। কেউ দলের মঞ্চ ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করলে তাঁকে ছেড়ে দেবে না দল। তৃণমূলকে ব্যবস্থা নিতে একটু সময় তো দিতে হবে। ভারতে একটি রাজনৈতিক দলও নেই, যারা ছ’দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে। কাউকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টা করা হচ্ছে না। নীরব মোদি তো কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নিতে পেরেছে কেন্দ্রীয় সরকার?’

Advertisement

পাশাপাশি, গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্যও আবেদন জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ফ্ল্যাট থেকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা ও সোনার গহনা উদ্ধার হয়েছে, তার উৎস কী? তাও খুঁজে বার করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। এই টাকার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। দলের টাকা হলে, তা দলীয় দফতর থেকেই উদ্ধার হত! তা তো হয়নি। ওই টাকা উদ্ধার হয়েছে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। অতীতে আমরা দেখেছি তদন্ত প্রক্রিয়া খুব দীর্ঘায়িত হয়। সারদা মামলায় এখনও পর্যন্ত বিচার সেই ভাবে শুরু হয়নি। চার্জশীট জমা দিতে পারিনি সিবিআই। তাই আমাদের আবেদন গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হোক। এবং যে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে তার উৎস কী? কোথা থেকে কলকাতায় এত টাকা এল? তাও অবিলম্বে খুঁজে বার করা হোক।’

পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি কোনও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক জানিয়েছেন, ‘এই প্রশ্নটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেই করা উচিত। কিন্তু যে তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে, তাতে তাঁকে নিজেকেই বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। কারও বিরুদ্ধে জনসমক্ষে কোনও প্রমাণ উঠে এলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ রয়েছে, তবুও খতিয়ে দেখুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বন্ধ করুক ইডি।’

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিরোধী দল সহ নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধেও তো প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না তাঁর দল। তাঁকে ইডি ও সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদও করে না। বিজেপিতে রয়েছেন বলেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।সিপিএমের এক নেতাও তো সারদা মামলায় অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সকলের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেন না।’

Advertisement

ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে বিরোধীরা যে প্রচার চালাচ্ছে, এদিন তারও জবাব দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘নাকতলার পুজোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে ওই মহিলার ছবি দেখাচ্ছে বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো প্রতিবছর সমস্ত পুজোর উদ্বোধন করেন। সেখানে মঞ্চে কারা থাকেন, তা তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তো নীরব মোদির ছবি দেখা গিয়েছে। জয়পুরের ঘটনায় দোষীদের সঙ্গেও তো বিজেপি সাংসদ, মন্ত্রীদের ছবি দেখা গিয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে কাউকে দেখা গেলেই কিছু প্রমাণিত হয় না।’
এদিনের এই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, তিন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কমিটির অপর সদস্য তথা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে থাকায় তিনি এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক ও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারিত করার পর দলের মুখপত্রের সম্পাদক করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়কে। এবং এই মুহূর্তে দলের কোনও মহাসচিব নেই। এই বিষয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.