বাংলার খবর
রুপোর রথে চেপে পথে নামেন জগন্নাথ দেব, নশিপুরের রথে জনসমুদ্র
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: করোনা অতিমারির জেরে গত দু’বছর বন্ধ ছিল রথযাত্রা। চলতি বছরে মুর্শিদাবাদ থানার নশিপুরের জাফরাগঞ্জ আখড়া রথযাত্রায় মেতেছেন।
আড়াইশো বছরের অধিক প্রাচীন নশিপুর আখড়ার রথযাত্রাকে ঘিরে স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলাবাসীর আগ্রহ সীমাহীন। নসিপুর আখড়ার রুপোর রথে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে দেখতে জেলা এবং জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছেন নশিপুরে।
এদিন সোনার জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রুপোর রথে চেপে পথে নামেন। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে নশিপুর রাজবাড়ির মাঠে একদিনের গ্রাম্য মেলা বসেছে। করোনার জন্য গত দুই বছর নিয়ম মেনে আখড়ার মধ্যেই রথাযাত্রা উৎসব পালিত হয়।
আনুমানিক ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে মোহন্ত লছমনদাস আচারী জাফরাগঞ্জ আখড়ার প্রতিষ্ঠা করেন। তবে আখড়ায় রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন পরবর্তী মোহন্ত চতুর্ভুজদাস আচারী। তিনি দুটি কাঠের রথ তৈরি করে রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রায় লোকেলোকারণ্য, জানুন মাহেশের রথের অজানা ইতিহাস
আখড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধনকুবের জগৎ শেঠের বাড়িতে গিয়ে রথযাত্রা শেষ হত। জগৎ শেঠের বাড়িতে সাতদিন কাটিয়ে উল্টো রথের দিন বিকেলে আখড়ায় ফিরত রথ। ১৭৮৮ খ্রীষ্টাব্দে মোহন্ত গোপালদাস আচারীর সময়ে আখড়ার রথ উৎসব আরও বড় আকারে হতে শুরু করে। তিনি দুটি পিতলের রথ তৈরি করেন।
চারটি রথেই নিম কাঠের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা থাকতেন। আনুমানিক ১৮২৫ খ্রীষ্টাব্দে মোহন্ত ভগবানদাস আচারীর সময় থেকে রুপোর রথ পথে নামে। রাজস্থান থকে কারিগর নিয়ে এসে রথ তৈরি করান। হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত রথটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রথের দিন রুপোর রথে উপবিষ্ট হন সোনার জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র জাফরাগঞ্জ আখড়ার রথযাত্রা উৎসবে রুপোর রথ দেখতে তৎকালীন সময়ে নবাব ও স্থানীয় জমিদারদের আত্মীয় ও অতিথিরা আসতেন বলে শোনা যায়।
জগৎ শেঠের বাড়িতে সাত দিন কাটিয়ে উল্টো রথের দিন আখড়ায় ফিরে আসতেন। আখড়ার রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে সাতদিন ধরে নসিপুরে গ্রামীণ মেলা বসত। পরবর্তী সময়ে গঙ্গা ভাঙ্গনে নদী গর্ভে চলে যায় জগৎ শেঠের পুরনো বাড়িটি। জগৎ শেঠের পুরনো বাড়িটি নদী গর্ভে চলে গেলেও প্রাচীন প্রথা মেনে আজও প্রতিবছর সোজা ও উল্টো রথের দুইদিন রুপোর রথ সহ জাফরাগঞ্জ আখড়ার পাঁচটি রথ জগৎ শেঠের পুরনো বাড়ির সামনে একটি মাঠে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় এবং সন্ধ্যার পূর্বেই আখড়ায় ফিরে আসে।
আখড়ার বর্তমান মোহন্ত রাঘবদাস আচারী জানিয়েছেন, আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়ে আখড়ার রথযাত্রা উৎসব শুর হয়। শুরু হয় আখড়ায় রাখা দুটি কাঠের ও পিতলের রথের মেরামতি ও মাজাঘষার কাজ। স্নানযাত্রার পরে ১০-১২ দিন ধরে তেতুল, লেবু ও ছাই দিয়ে মেজেঘষে চকচকে-ঝকঝকে করে তোলা হয় পিতলের রথ দুটিকে।
আরও পড়ুন: নিত্যদিনের ব্যবহার অযোগ্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি রথ!
রথের পাঁচদিন আগে শুরু হয় রুপোর রথটিকে ধুয়েমুছে পরিস্কার করে তোলার পালা। চাকা লাগানো লোহার পাটাতনের উপর প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার রুপোর রথটি বসানো থাকে। কড়া পুলিসি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রুপোর রথ পথে নামে।