বাংলার খবর
চার গ্রামের নামকরণ দিয়ে শুরু হয়েছিল কুঁজিয়া চন্ডী মন্দিরের বাসন্তী পুজো, জানুন এই পুজোর অজানা ইতিহাস

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কালিয়াগঞ্জের কুঁজিয়া চন্ডীমন্দিরে বাসন্তী পুজো ঘিরে উৎসবের আননদে মাতোয়ারা বাসিন্দারা। অবিভক্ত বাংলার হরিপুরের জমিদারদের হাত ধরে শুরু হওয়া ৪৫০ বছরের পুরনো এই কালিয়াগঞ্জের কুঁজিয়া চন্ডী মন্দিরের বাসন্তী পুজো।
যদিও গত দু’বছর করোনার কারনে এই পুজোর অনুষ্ঠাণ ব্রাত্য থাকলেও, অতিমারির আবহ কাটিয়ে চলতি বছরে গ্রামের সমস্ত মানুষ মেতে উঠেছেন বাসন্তী দেবীর আরাধনায়। পুজোকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলাও।
কথিত আছে, উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের অনন্তপুর গ্রামপঞ্চায়েতের আটঘড়া, কুঁজিয়া, মহাগ্রাম ও মুজিয়া এই চারটে গ্রামের নামকরণ দিয়েই কুঁজিয়া চন্ডী মন্দিরে ৪৫০ বছর ধরে দশভূজা দূর্গার বাসন্তী পুজো হয়ে আসছে। এই বাসন্তী পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল অষ্টমীর দিনে মায়ের চরণে কলার ছড়ি নিবেদন করা। কথিত আছে মায়ের চরণে কলার ছড়ি দিয়ে নিবেদন করলে ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। আর এই বিশ্বাসের উপর ভর করেই গোটা জেলা তথা উত্তরবঙ্গের এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার থেকেও পূণ্যার্থীরা কুঁজিয়া চন্ডী মন্দিরের বাসন্তী পুজো দেখতে ভিড় করেন।
প্রসঙ্গত পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে ‘বাসন্তী পুজো’ নামে প্রসিদ্ধ হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিহারের পাচারের আগে বাজেয়াপ্ত লক্ষাধিক টাকার গাঁজা, গ্রেফতার ১
সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন। কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়। কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ। বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন।
ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে বড় ঘোষণা, জানুন কত কমল দাম
তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তারা চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। শুরু হয় বাসন্তী পুজো। যদিও এখন কয়েকটি বাড়িতেই এই পুজোর চল রয়েছে।