বাংলার খবর
Big Breaking: মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্যয়কে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৬ দিন আগেই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তারপর থেকেই জল্পনা চলছিল। অবশেষে সেটাই সত্যি হল। পার্থ চট্টোপাধ্যয়কে সরিয়ে দেওয়া হল মন্ত্রিত্ব থেকে। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক ছাড়াও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ছিল পরিষদীয়, তথ্য প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাত্র ১৫ মিনিট হয় এই বৈঠক। তারপরই নবান্ন থেকে মুখ্য সচিবের সই করা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে একথা ঘোষণা করা হয়। এই তিনটি দফতর আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই থাকবে।
পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠকেও এই কথা নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত এই তিনটি মন্ত্রক আমার হাতেই থাকবে।’ পরে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও এই নির্দেশিকা প্রকাশ করে সে কথা জানান।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী থাকার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষদীয় দফতরেরও মন্ত্রী ছিলেন। তবে তার আগে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন শিক্ষক নিয়োগে রাজ্যে ব্যাপক দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে সিবিআই ও ইডি।
এরপরই গত ২২ জুলাই সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়ি-সহ ১৪ জায়গায় হানা দেয় ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। প্রায় ১৯ ঘণ্টা ধরে জেরা করার পর রাত একটা ৫৫ মিনিটে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। এই মুহূর্তে ইডি-এর হেফাজতেই রয়েছেন তিনি। ওই দিনই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলার হরিদেবপুরের ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা নগদ-সহ সোনার গহনা ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। তদন্তকারী আধিকারিকরা দাবি করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
এই নিয়ে যখন রাজ্য ও দেশের রাজনীতি উত্তাল, তখনই সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় দোষী প্রমাণিত হলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল এবং সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। পরে নজরুল মঞ্চে বঙ্গ সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানেও একই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলের ও সরকারের সমস্ত পদ থেকে সরানোর দাবি জোড়ালো হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার সকালেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পরে তিনি সেই টুইট ডিলিটও করে দেন। দলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। এরপরই বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী মন্ত্রিসভা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নবান্নে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই নবান্নে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে ঘরে বসতেন, সেই ঘরের সামনে থেকে তাঁর নামের ফলকও খুলে ফেলা হয়। এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দিয়েই যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, তা বৃহস্পতিবার নবান্নে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠকেই জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যে দফতরগুলি ছিল, সেগুলি আপাতত আমার কাছে থাকছে। হয়তো কিছুই করব না, কিন্তু যতক্ষণ না নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠন করছি, ততক্ষণ এই দফতরগুলো আমার কাছে এসেছে।পার্থদাকে রিলিফ দিয়েছি।’