আন্তর্জাতিক
করোনা বাড়িয়েছে ধনী-গরিব বৈষম্য, দাবি রিপোর্টে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত দু’বছর ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে দাপট দেখিয়েছে মারণ ব্যাধি করোনাভাইরাস। অদৃশ্য এই ব্যাধির দাপটে ২০১৯ সালের পর থেকে মুহুর্তের মধ্যে পাল্টে গিয়েছে জীবনের ছন্দ। দু’বছর পরে সবকিছু ধীরে-ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও এখনও পৃথিবী থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি কালান্তক করোনার কালবেলা।
চিন থেকে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছিল গোটা মানব সভ্যতা। প্রতিনিয়ত চলেছে অদৃশ্য ব্যাধির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার লড়াই। বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছিল অক্সিজেন, ওষুধ সঙ্কট। হাসপাতালগুলিতে বেডের আকাল। এই করোনা (Covid19) যেমন আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে বিশেষ করে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জেরে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল গরিব মানুষের। লকডাউনে বাড়ি ফেরার তাড়নায় পথেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। তেমনই এই লকডাউনে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় একজন ধনী হয়েছেন বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
এই বিষয়ে ‘Oxfam report’-এ দাবি করা হয়েছে, করোনা অতিমারির দু’বছরে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় কোটিপতি হয়েছেন অন্তত ১ জন। শুধু তাই নয় করোনা আসার আগে গত ২৩ বছরে তাঁরা কোটিপতি হতে পারেননি। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ মাসে করোনার কারণে কোটিপতি হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন। এই বিলিয়নেয়াররা সম্মিলিতভাবে $১২.৭ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ৯৮৪.৯৫ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ বিশ্বের জিডিপির ১৪%।
আরও পড়ুন: বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা! ২০২২ সালে ৩০ গুণ গরম বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে, দাবি রিপোর্টে
শুধু তাই নয়, করোনা মহামারীর পরে বিশ্বে ৫৭৩ বিলিয়নেয়ার বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৩০ ঘণ্টায় একজন বিলিয়নিয়ার বেড়েছে। সুতরাং যারা ধনী ছিলেন তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেড়েছে।
অন্যদিকে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। শুধুমাত্র ২০২১ সালে ১২.৫ কোটিরও বেশি লোক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। যারফলে দরিদ্রতম ৪০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। মহামারীর আগে গড়ে মানুষের আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। মহামারীর আগে, লিঙ্গ বৈষম্যের বেতনের ব্যবধান ১০০ বছরে শেষ হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তবে এখন এটি ১৩৬ বছর সময় নিতে পারে। ২০২০ সালে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা ১.৪ গুণ বেশি ছিল। পুরুষদের তুলনায় শ্রমশক্তির বাইরে থাকা। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কর্মরত নারীর সংখ্যা ছিল ১.৩ কোটির কম। যেখানে কর্মরত পুরুষদের সংখ্যা আরও বেশি ছিল।
ধনী দেশগুলিতে বসবাসকারী মানুষের গড় আয় দরিদ্র দেশে বসবাসকারীদের তুলনায় ১৬ বছর বেশি। এছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হয় গড়ে ১৫ হাজার মানুষের। সো পোলো, ব্রাজিলের ধনী এলাকায় বসবাসকারী লোকেরা দরিদ্র এলাকায় বসবাসকারীদের তুলনায় ১৪ বছর বেশি বাঁচবে।
আরও পড়ুন: ‘আপনি এখন ঘুমাতে পারেন…’ কোয়াডের মঞ্চে আলবিনেজকে বার্তা বাইডেনের
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে, গত বছর থেকে ৩৩.৬ শতাংশ হারে বেড়েছে খাবারের দাম। চলতি বছরেও ২৩ শতাংশ বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। ২০২২ সালে সারা পৃথিবীতে মোট দরিদ্র রয়েছেন ২৬.৩ শতাংশ। রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, প্রতি ৩৩ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে গরিব হয়েছেন ১ কোটি মানুষ।