বাংলার খবর
আবারও কুসংস্কারের ছোঁয়া পাথরপ্রতিমায়, মৃত শিশুর দেহ খুবলে খেল পিঁপড়ে!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ২৪ ঘন্টা অন্ধকার ঘরে মৃত শিশুকে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা। এমনই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথর প্রতিমার রাক্ষস খালি এলাকায়। এদিকে বন্ধ ঘরে শিশুর মৃতদেহ খুবলে খেল পিঁপড়ে! দুর্গন্ধ ছড়ালেও শিশুর বেঁচে ওঠার আশায় বসে রইলেন বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্যরা। বিষয়টি জানতে পেরে এমন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন এলাকার মানুষ।
বুধবার বিকালে জলে ডুবে মৃত্যু হয় গৌরব মাইতি নামে বছর দুয়েকের এক শিশুর। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন পুলিশ জেলার পাথরপ্রতিমায় কিছু অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মানুষ মৃত শিশু বেঁচে উঠবে এই আশা দিয়ে ২৪ ঘন্টা ধরে বন্ধ ঘরে শিশুর মৃতদেহ রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেয়। কিন্তু শুক্রবার সকালে বাড়ির লোকেরা ঘর খুলে দেখেন শিশুর মৃতদেহে পচন ধরে গিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
দুপুরে মা ববিতা মাইতির সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে তিন বছরের শিশু গৌরব। হঠাৎ বেলা ৩ টের দিকে মা লক্ষ্য করেন ছেলে তার কাছে নেই। বহু খোঁজাখুঁজির পরে পাশেই একটি পুকুরে ভাসতে দেখা যায় শিশুটিকে। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় মাধব নগর গ্রামীণ হাসপাতালে। এরপরই চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে শিশুটির দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরই শুরু হয় কুসংস্কার পালন। অভিযোগ, সেই মণ্ডলীই শিশুটিকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব বলে বিধান দেন। এরপরই মৃত শিশুটিকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মৃত শিশুর পরিবারকে তাঁরা বলেন, সারারাত দরজা খোলা যাবে না। ঘরের ভিতরে কেউ ঢুকতেও পারবেনা। সকাল হলেই মৃত শিশু মা বলে ডাকবে।
এই বিধান মেনেই প্রায় ১৮ ঘণ্টা মৃত শিশুকে অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখেন তাঁরা। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রাণ ফেরেনি শিশুটির। সকালে তেমন কোনও অলৌকিক ঘটনা না ঘটায় বাড়ির লোক ভিতরে ঢোকে। দেখা যায় মৃত শিশুটির দেহ ততক্ষণে পচে গিয়েছে, এবং পিঁপড়ে ধরেছে। এই শিশুমৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। এই খবর ছড়িয়ে প্রচুর মানুষ এলাকায় এসে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। এমন কি ওই দীক্ষামন্ডলীদের বাড়িতে গিয়ে ঘেরাও করেন স্থানীয়রা।
গোটা ঘটনায় ফুঁসছেন এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা এ ধরনের ভয়ংকর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।