বাংলার খবর
বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টেদের রেখে চিরঘুমে স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে,কেল্টুদা’দের রেখে চিরঘুমে শায়িত নারায়ণ দেবনাথ। মঙ্গলবার সকালে প্রয়াত হলেন বাংলা কার্টুন ও কমিকসের প্রাণপুরুষ। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎই নারায়ণ দেবনাথের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, হৃদযন্ত্রে সমস্যা হয়েছিল প্রবীণ কার্টুন শিল্পীর। তাঁকে বাঁচানোর সমস্ত চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু চিকিৎসায় আর সাড়া দেননি নারায়ণ। সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে সকাল ১০.১৫ নাগাদ প্রয়াত হলেন তিনি। নারায়ণ দেবনাথ অনেক দিন ধরেই বয়সজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দলও তৈরি করা হয়েছিল। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকায় শনিবার রাতেই তাঁকে বাইপ্যাপ থেকে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তার কিডনিতে সমস্যা ছিল।
সোমবার রাতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি কথাও বলতে পারছেন। নলের মাধ্যমে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছিল। প্রস্রাবের পরিমাণ ভালো ছিল। কিন্তু আজ সকালেই হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সকাল থেকেই হৃদযন্ত্রে গুরুতর সমস্যা হচ্ছিল প্রবীণ শিল্পীর। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। রক্তচাপও দ্রুত ওঠানামা করছিল। সব ধরনের চেষ্টা চালান চিকিৎসকেরা। কিন্তু চিকিৎসায় আর সাড়া দেননি নারায়ণ দেবনাথ। হাঁদা ভোদা, বাঁটুল, নন্টে ফন্টেকে রেখে চির বিদায় নিলেন স্রষ্টা।উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। অল্প বয়স থেকেই আঁকার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। তাঁর বাড়িতে অলঙ্কার তৈরির হতো। তাই ছোট থেকেই গহনার নকশা তৈরি করতেন নারায়ণ দেবনাথ।
স্কুলের পাঠ শেষ করে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে আর্ট কলেজে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তার পর বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়েও কাজ করেছেন। এরপরই ১৯৬২ সালে ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ১৯৬৫ সালে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ এবং ১৯৬৯ সাল থেকে ‘নন্টে-ফন্টে’ আট থেকে আশির বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ২০২১সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান। ২০১৩ সালে পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি ও বঙ্গবিভূষণ সম্মান। ২০১৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দেন। তাঁর সৃষ্টিই তাঁকে অমর করে রাখবে। আজ দুপুর একটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর শিবপুরের বাড়িতে। তারপর বিকালে শিবপুর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর মৃত্যুতে শিল্প, সাহিত্য জগতের পাশাপাশি সমস্ত ক্ষেত্রের মানুষরাই শোক প্রকাশ করেছেন।