দেশের খবর
ঘাটালে দলের বিজয়া সম্মিলনীতে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে ঘাটাল শহরে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জল সম্পদ উন্নয়ন ও ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী ডাক্তার মানস ভুঁইয়া।
জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি, তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশীষ হুদাইত, মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেত্রী কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিপালী সিং, বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া, অরূপ ধাড়া সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার অধীন সাতটি বিধানসভা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ,কর্মীসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কাজ করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেছেন, কোনও গাফিলতি ও অলসতা মেনে নেওয়া হবে না।
সামনে পৌরসভা নির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই মানুষের পাশে গিয়ে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। তিনি দলের প্রতিটি ব্লক সভাপতিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে দলের জেলা সভাপতির কাছে প্রতিটি ব্লকের অঞ্চল ও বুথ কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্লকের সভাপতি ওই তালিকা জেলা সভাপতির কাছে জমা দেবেন না, তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার হবে বলেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে বাংলায় মা মাটি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার উন্নয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করছেন। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনা সত্বেও বাংলার উন্নয়ন কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সৈনিক হিসেবে আমাদের যা করণীয় তা করতে হবে। অপরের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ দেখে নিজেকে বিচার করা উচিত।
‘ তিনি সিপিএমের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘শুধু কেশপুরেই ৪৬০ জন সিপিএমের আমলে খুন হয়েছে। জামবনীতে ৩৭৬ জন খুন হয়েছে। গড়বেতায় ৪২জন আদিবাসীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার নিজের বাড়ি তিনবার আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল সিপিএম। আমার পরিবারের ৫৫ বিঘা জমির ধান লুট করেছিল সিপিএম। লক্ষ্মী পুজোর ধান টুকুও ছিল না। আমার স্বপ্ন ছিল ডিএম হওয়ার। কিন্তু আমার বাবা আমাকে ডিএম হওয়ার বদলে ডাক্তারি পড়তে পাঠায়। বিদেশে চাকরি জুটেছিল। বিদেশে চাকরি করতে যাইনি। সিপিএমের সন্ত্রাস আজও আমি ভুলে যাইনি। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা শুধু নয়, গোটা রাজ্য জুড়ে সিপিএম কীভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে ছিল তা ভুলে গেলে চলবে না। গড়বেতা, কেশপুরে গিয়েছি জল খেতে দেয়নি। সিপিএম নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছিল তা এখনও মানুষ ভুলে যায়নি।’ একই ভাবে বিজেপিকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, ‘ঠিক তেমনি বিজেপি একটা অসভ্য বর্বর সাম্প্রদায়িক দল।
বাংলার বুকে অশান্তি সৃষ্টি করার চক্রান্ত শুরু করেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ বিজেপিকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। তাই বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এনেছে।’ সাংগঠনিক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী বলেছেন, ‘দলের প্রতিটি কমিটিতে মহিলাদের রাখতে হবে। মহিলারা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছে। বিজেপি বিভিন্ন জায়গায় উস্কানিমূলক মন্তব্য করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাতে কেউ কান দেবেন না। বিজেপির বিরুদ্ধে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’ সামনে পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে। ঘাটাল সাংগঠনিক এলাকার ঘাটাল, রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই খড়ার ও চন্দ্রকোনায় পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে। ওই পাঁচটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীদের তিনি বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার জন্য আবেদন জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, যদি প্রতিটি প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভালোভাবে কাজ করে থাকেন তাহলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপি এই এলাকায় একটি আসনও পাবে না। তাই তিনি প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিজেদের এলাকার উন্নয়নকে আরও জোরদার করার জন্য আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে দলের প্রতিটি কর্মীকে তিনি হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেন। তাহলেই বিজেপির মতো অশুভ শক্তিকে বাংলা তথা দেশ থেকে বিদায় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মানস ভুঁইয়া।