স্কুলের রাঁধুনী থেকে অঙ্কের শিক্ষক! ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক করে তাক লাগিয়ে দিলেন
Connect with us

বাংলার খবর

স্কুলের রাঁধুনী থেকে অঙ্কের শিক্ষক! ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক করে তাক লাগিয়ে দিলেন

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কথাতেই আছে ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। আর এই প্রবাটাকেই বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন মুর্শিদাবাদের বিশাখা পাল। ফারাক্কার নয়নসুখ শ্রীমন্ত পাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করেন বিশাখা। স্কুলের প্রায় ৩৬০ জন পড়ুয়া প্রতিদিন তাঁর হাতের রান্না করা খাবার চেটেপুটে খায়। কিন্তু সেই বিশাখা পাল যে অঙ্কতেও পটু, তা কারোরই জানা ছিল না।

বৃহস্পতিবার সেই রহস্য উদঘাটিত হয়। ওইদিন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকমতো অঙ্ক করতে না পারায় বকাবকি করছিলেন মাস্টারমশাই। সেই দেখেই ক্লাসে এসে উপস্থিত হন বিশাখা। রান্নার হাতা, খুন্তি ছেড়ে হাতে তুলে নেন চক ও ডাস্টার। তারপর যেভাবে প্রতিদিন তিনি পড়ুয়াদের জন্য রান্না করেন, সেই ভাবেই চরম সযত্নে ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক কোষে পড়ুয়াদের বোঝাতে শুরু করেন।

সেই দৃশ্য সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেন মাস্টারমশাই পরেশ দাস। তারপর সেই ভিডিও তিনি ফেসবুকেও পোস্ট করে দেন। বিশাখা পালের অঙ্ক শেখানোর দৃশ্য নিমিষের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। যা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ে প্রশংসা।
জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই স্কুলে মিড ডে মিল রান্না করে আসছেন বিশাখা পাল। আর্থিক অনটনের কারণে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর আর এগোতে পারেননি। সেই দুঃখ তাঁর মনের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে। তাই কাজ না থাকলে বিভিন্ন ক্লাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের পড়ানো দেখতে থাকেন। সেই রকমই গত বৃহস্পতিবার চতুর্থ শ্রেণির অঙ্কের ক্লাস চলাকালীন মাস্টারমশাইয়ের পড়ানো দেখছিলেন বিশাখা। ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুতেই অঙ্ক করতে পারছে না দেখে নিজেই ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ুয়াদের অঙ্ক বোঝাতে শুরু করেন।

Advertisement

শিক্ষক পরেশ দাস বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি চতুর্থ শ্রেণিতে অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছিলাম। তখন বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী অঙ্ক পারছিল না। তখন হঠাৎই বিশাখা দি ক্লাসে ঢুকে আমার কাছ থেকে চক, ডাস্টার নিয়ে অঙ্ক দেখিয়ে দিতে চান। দেখলাম বোর্ডে দিব্যি অঙ্ক করে পড়ুয়াদের বোঝাচ্ছেন তিনি। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইলে গোটা দৃশ্যটা তুলে রাখি।’

এই ব্যাপারে বিশাখা পালকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘পড়াশোনার প্রতি আমার বরাবরেরই শখ। কিন্তু আর্থিক কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। সংসার চালানোর জন্য রান্নার কাজ করি। কিন্তু মনের মধ্যে আজও পড়াশোনার ইচ্ছাটা রয়ে গিয়েছে। নিজে যখন পড়াশোনা করতাম তখন শিক্ষকদের কাছ থেকে যে অঙ্ক শিখেছিলাম, সেইগুলোই আমি ওদের শিখিয়েছি। আমার শেখানো থেকে যদি ওদের লাভ হয় তাহলে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করব।’ এই ঘটনা জানার পর বিশাখা পালকে নিজের দফতরে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বিধায়ক মনিরুল ইসলাম।

Advertisement
Continue Reading
Advertisement