বাংলার খবর
কলকাতা পুরভোটের প্রথম নির্বাচনী সভা থেকেই দলীয় প্রার্থীদের কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কলকাতা পুরভোটের জন্য বুধবার প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই দলীয় প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা যাতে দল মত নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকরা পান, তা যথাযথভাবে পালন করার কথা প্রার্থীদের আরও একবার জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়, বুধবার উত্তর কলকাতার ফুলবাগানের জনসভা থেকে বাড়ি তৈরির প্রকল্পে স্বজনপোষণ, দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট রাজ নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এসব কিছুই করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এই নির্দেশ মানতে না পারলে কাউন্সিলর হওয়ার কোনও দরকার নেই বলেও পরিষ্কার করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমার এলাকায় ঘর করবেন, এটা দিতে হবে, এ সব আর চলবে না। সব কিছুতে টাকা চাই না! সরকারের কাজ করবে তাতেও টাকা চাই! গরিব মানুষের ঘর বানাবে, তাতেও টাকা দরকার! টাকা দিয়ে ঘর দেওয়া, ওসব চলবে না। এলাকায় কে বাড়ি করবে, তা কাউন্সিলর ঠিক করবে না। বাড়ি তৈরির সামগ্রী কোথা থেকে কিনবেন, তাও কাউন্সিলর ঠিক করে দেবে না। যাঁরা আবেদন করছেন, খতিয়ে দেখে তাঁদের কাজ করে দাও।
এর জন্য মুখ কেন দেখতে হবে? আমার কাছে কিছু এলে, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিই। আর কোনও জায়গায় বিপদ হলে কাউন্সিলর প্রথমে ছুটে যাবেন। যিনি এসব দেখতে পারবেন না, তিনি কাউন্সিলর হবেন না। সব অনলাইন করে দেব। সাতদিনের মধ্যে ঘর তৈরির টাকা পাবেন। কাউকে টাকা দিতে হবে না। কেউ টাকা নিতেও পারবে না। সেই ব্যবস্থাই করব।’ কলকাতা পুরভোটে দলের ভাবমূর্তিকে অক্ষুন্ন রেখেই নির্বাচনী লড়াইয়ে যে তৃণমূল লড়তে চাইছে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এর আগে কলকাতা পুরভোটের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে মিটিংয়ের পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভোটে কোনরকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না।
শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করার জন্য দলীয় প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বুধবারও দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে অক্ষুন্ন রাখার কথাই বারবার উঠে এলো মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। নাগরিকদের সমস্ত রকম পরিষেবা দ্রুত দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও কাজ ফেলে রাখা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি একদিন অনুপস্থিত থাকলে আমার শেষ ফাইলটাও এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে ক্লিয়ার করে তবে বাড়ি যাই। একটাও কাজ আমাদের পড়ে থাকে না। মনে রাখবেন এমপি, এমএলএ-দের দ্বারা সব কাজ হয় না। তাঁরা লোকাল কাজ করতে পারেন না। সেই কাজগুলো করে কাউন্সিলর, কমিশনার, গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, মিউনিসিপালিটি। যে কলকাতাকে একসময় দুঃস্বপ্নের নগরী বলতেন কেউ কেউ, এখন তারা স্বপ্নের নগরী বলে।
আমরা এখন স্বপ্নের ফেরি করে বেড়াই। এখন কলকাতায় যেই আসে সার্টিফিকেট দিয়ে যায়। আপনি মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লিতে যান, এত ভালো সাজানো শহর পাবেন না। ওদের এত টাকা। তবুও এগিয়ে কলকাতা। কলকাতায় কী হয়নি! এখানে জলের উপর কর দিতে হয় না। দিল্লিতে দুই বালতি জলের জন্যও টাকা দিতে হয়। রান্না করবেন না কাপড় কাচবেন? বাংলার মানুষ যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তারা চান কলকাতা কর্পোরেশনে তৃণমূল কংগ্রেস থাকুক। যেই আসে আমাকে বলে- আগে কী ছিল, আর এখন কী হয়ে গিয়েছে! আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কোথাও হিন্দিভাষী, কোথাও বাংলাভাষী, কোথাও উর্দুভাষীরা রয়েছেন। সবাই সমান ভাব উৎসব করি। আমরা দুর্গাপুজোও করি, ছটপুজোও করি। কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকে সারা বিশ্ব। কলকাতাকে এ ওয়ান সিটি করেছিলাম আমি।
যত শহরই থাক, কলকাতা কী ভাবছে সেটা সারা ভারতবর্ষকে ভাবাবে আবার। কলকাতার মানুষের একটা ভোট আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। আমাকে এগিয়ে দেবে।’ এদিনের জনসভা থেকে বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প গুলোর কথা তুলে ধরার পাশাপাশি এবার যে তাঁর লক্ষ্য শিল্প এবং কর্মসংস্থান, তাও তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘আমরা কোনও কাজ ফেলে রাখি না। কোনও কোনও পার্টি আছে শুধু মুখে বলে, করে না। আর আমরা মুখে বলি এবং তিন-চার মাসের মধ্যে সেটা করি। এটা অন্য পার্টির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। আমি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করে দেখিয়ে দেব, তোমরা যতই বাধা দাও না কেন, আটকাতে পারবে না। হিংসা করে আর নিন্দা করে কখনও মানুষের ভালবাসার ঢেউ রোখা যায় না। সারা দেশে বিজেপিকে পরাস্ত দেখতে চাই। তাই ২০২৪-এও সমস্ত নির্বাচনেই মনে রাখবেন খেলা হবে।’