বাংলার খবর
নির্বাচনী সভা থেকে দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ ঘোষণা, নীল-সাদা রং নিয়ে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কলকাতা পুরভোটের শেষ লগ্নে প্রচারে ঝড় তুলল তৃণমূল। উত্তর কলকাতায় দলের ১১ জন প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যখন পোস্তা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত যখন মিছিল করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, বাঘাযতীন এবং কালীঘাটে নির্বাচনী সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
। আর প্রত্যেকটা সভা থেকেই তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প গুলি তুলে ধরার পাশাপাশি দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ ঘোষণা, নীল-সাদা রং- সমস্ত কিছু নিয়েই বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বৃহস্পতিবার প্রথমে বাঘাযতীন ও পরে বেহালা ও হাজরায় দু’টি সভা করেন তিনি। তিন সভা থেকেই তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কলকাতার জন্য কী কী করেছে তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ড। আগামিদিনে শহরবাসীর জন্য কী কী পরিকল্পনা রয়েছে, তার তালিকাও প্রকাশ করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোন বিষয়গুলোর উপর নজর দিয়েছেন, সেই কথাও তুলে ধরেন। শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য নীল-সাদা রং নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন নীল-সাদা রঙ করেছিলাম তখন সবাই বলেছিল আর্জেন্টিনা।
আর এখন দিল্লি গিয়ে দেখছি সেখানে নীল-সাদা রঙ করা হচ্ছে, মুম্বই গিয়েছিলাম, সেখানেও দেখছি নীল-সাদা রঙ হচ্ছে। আমি করলে আর্জেন্টিনা, আর তোমরা করলে কি টুনটুনি না টোনাটুনি? আসলে আর্জেন্টিনার কথা ভেবে কলকাতা নীল-সাদায় সাজানো হয়নি। নীল-সাদা হল আকাশের রঙ। আর আকাশের কোনও সীমা হয় না।’ বাঘাযতীনের সভা থেকে দক্ষিণ কলকাতার জন্য তাঁর একাধিক উন্নয়নের যে সমস্ত পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক উড়ালপুল তৈরি করার কথা বলেছেন তিনি। তারাতলা থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি, আনোয়ার শাহ থেকে যাদবপুর ফাঁড়ি, গড়িয়া থেকে যাদবপুর, মাঝেরহাট থেকে টালিগঞ্জ, ইএম বাইপাস থেকে নিউটাউন, রুবি থেকে কালিকাপুর, সোনারপুর থেকে বানতলা, সোনারপুর থেকে চক্রবেড়িয়া পর্যন্ত উড়ালপুল তৈরি করার ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি একাধিক সেতু নির্মাণের কথাও বলেছেন।
বুধবারই কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’-র স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তার জন্য বাঘাযতীনের সভা থেকে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই হেরিটেজ তকমাকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। কারণ ভোটের আগেই বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল বাংলায় তৃণমূল সরকার দুর্গাপূজা করতে দেয় না। এদিন সেই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘গতকাল যা পেয়েছি, তাতে আমার হৃদয় ভরে গিয়েছে। যখন খবর পেয়েছি, গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। মাথা থেকে বার করেছিলাম পুজো কার্নিভাল। তখন কেউ কেউ বলেছিল মমতাজি তো দুর্গাপুজো করতে দেন না। আজ ওঁদের মুখে চুনকালি। বাংলার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এর চেয়ে বড় সম্মান আর কিছু নেই। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ।
বাংলার দুর্গাপুজো আজ গোটা বিশ্বে বন্দিত। আমাদের বর্ণময়, ছন্দময় দুর্গাপুজো আজ বিশ্বের উৎসব। আজ বাংলা বিশ্ববাংলা হয়ে গিয়েছে। বাংলাকে বিশ্বসেরা করেই ছাড়ব।’ এদিনের সভায় থেকে কলকাতায় প্রত্যেকটি বাড়িতে ২০২৪ সালের মধ্যে পাইপলাইন জল পৌঁছে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য রাজ্যে জলের ওপর কর দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেছেন, ‘দেশের প্রায় সব জায়গায় জলের উপর কর দিতে হয়। কিন্তু বাংলায় জলের উপর কোনও কর নেওয়া হবে না। আমাদের এখানেও জলকর বসানোর জন্য চাপ দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর জলের জন্য কর বসাতে পারব না আমি।
আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে রাজ্য জুড়ে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেব।’ মেট্রোরেলে তাঁর তৈরি করে দেওয়া প্রকল্পগুলো কেন্দ্রের কারণেই দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মেট্রোরেলের কাজের জন্য কোনও উদ্বাস্তু কলোনির উচ্ছেদ করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, মেট্রো রেলের দু’লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প করেছিলাম। আমি থাকলে এক বছরের মধ্যেই কলকাতার সমস্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ করে দিতাম। কেন্দ্রের জন্যই দেরি হচ্ছে। বাংলায় কোনও উদ্বাস্তু কলোনিরও উচ্ছেদ করা যাবে না। উদ্বাস্তু কলোনিতে আইনত পাট্টা দেওয়া হবে।’