বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রায় ৩০০ বছর পুরনো ঐতিহ্যবাহী মা জহুরার আরাধনায় এখন ব্যস্ত মালদার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জহুরাতলা ছাড়াও জেলার সর্বস্তরের, সর্ব ধর্মের মানুষজন। সময়টা ছিল ১০৮৩ বঙ্গাব্দ। প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা।
ঘন জঙ্গলের মধ্যে আমবাগানে ঘেরা ছোট্ট একটা সুন্দর গ্রাম, পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী মহানন্দা নদী। ঠিক এই গ্রামেই প্রথম শক্তি দেবীর আরাধনা শুরু করেন, মিথিলার দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছল্ব তেওয়ারি। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে, তিনি এই দুর্গম জোহরা তলা গ্রামে পুজো করার জন্য একদিন স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশমতো প্রথমে মাটির মন্দির গড়ে শুরু হয়েছিল দেবীর আরাধনা। এখানে মাতৃরূপ প্রথাগত মা কালীর মত নয়। স্বপ্নে পাওয়া প্রাচীন রীতি মেনে এখানে মা পূজিত হন মুখোশরূপী চন্ডী রূপে। তেওয়ারি পরিবারের সদস্যরাই বংশানুক্রমে এই পুজো করে আসছেন। ১২১৩ খ্রীস্টাব্দে এখানে স্থায়ী মন্দির গড়ে ওঠে। তারপর দীর্ঘ সময়ে বিবর্তিত হয়েছে মন্দিরের রূপ।
কিন্তু এখনও বদলায়নি মন্দিরকে ঘিরে চারিদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখনও রয়েছে চারিদিকে ঘন সবুজ। আমবাগান আর বটগাছের শান্ত ঘন ছায়ায় অবস্থিত এই মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়ালেই বিভিন্ন ধরনের পাখির ডাকে মন উদাস হয়ে যায়। অদ্ভুত এক শান্তি গ্রাস করে গোটা শরীর জুড়ে। হয়তো তার টানেই এখনও প্রতিবছর এখানে ছুটে আসেন হাজার-হাজার মানুষ। মালদা তো বটেই, রাজ্য, দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ হাজির হন এই মন্দিরে থাকা মায়ের টানে। মালদা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এই জহুরা কালী মন্দির।
সীমান্ত ঘেঁষা এই মন্দিরে জহুরা চন্ডী মুখাই এখনও এখানকার আরাধ্য। ইতিহাসবিদরা জানান, এই জহুরা চন্ডী মুখার সঙ্গে বালুচিস্তানের মরুতীর্থ হিংলাজ মায়ের অনেকটা মিল রয়েছে। মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই মন্দিরে বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হলেও সারাবছরই মায়ের নিত্য পুজো হয় এখানে। বৈশাখ মাসে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ পুজো, প্রায় একমাসব্যাপী থাকে মেলা। এহেন ঐতিহাসিক মন্দিরে কালী পুজো উপলক্ষে সেজে উঠছে নতুন উদ্যমে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসবেন মায়ের টানে এমনই আশা মন্দিরের সেবায়িতদের।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ