ভাইরাল খবর
ট্রেনের কামরায় পাথরের ঝংকারের সঙ্গে গান গেয়ে জীবনযুদ্ধ চালাচ্ছেন মালা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কোনও এক সময়ে দু’টি পাথরের ঘর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসা ছোট্ট আগুনের ফুলকি কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল মানবসভ্যতাকে। বর্তমানে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা সুপারফাস্ট ট্রেনের কামরায় শৈশব কোলে নিয়ে সেই দু’টুকরো পাথরের সৃষ্টি ঝংকার আর খোলা গলায় সংগীতকে হাতিয়ার করেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের সাঁইথিয়ার ভ্রাম্যমাণ শিল্পী মালা চৌধুরী।
বাড়িতে বাবা-মা, স্বামী রয়েছে। স্বামী সামান্য দিনমজুরির কাজ করে। সেইভাবে কোনও আয় নেই। তাই সংসারের হাল ধরতে গানকেই বেছে নিয়েছেন মালা। শিয়ালদহ থেকে ছাড়া হলদিবাড়ি, রাধিকাপুর, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের কামরায় আচমকাই পাথর ঠোকাঠুকির শব্দে সম্বিত ফেরে যাত্রীদের। ততক্ষনে দেড় মাসের কোলের সন্তানকে আগলে নিয়ে, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ পরা শিল্পী শুরু করে দিয়েছেন তাঁর পরিবেশন। কোলের শিশুর ঘুম ভাঙছে, আবার ঘুমিয়ে পরছে। তবে চোখের দুটি পাতা বড় বড় করে মেলে কান পেতে যাত্রীরা মত্ত পাথর শিল্পীর সংগীতে।
এমন অনেককেই ট্রেনে গান গেয়ে আয় করতে দেখলেও শুধু মাত্র দু’টি পাথরের সাহায্যে এমন তাল সৃষ্টি এই প্রথম দেখলেন বলে জানালেন যাত্রীরা। মালার গানও তাঁদের মুগ্ধ করেছে। যাত্রীদের আনন্দ দিয়ে রোজগার করতে পেরে খুশি মালাও। প্রতিদিন বর্ধমান থেকে বোলপুর পর্যন্ত ট্রেনে গান গেয়ে চলেছেন মালা। গত ৫ বছর ধরে এটাই তাঁর প্রতিদিনের রুটিন। তবে নিজের এই জীবন সংগ্রাম নিয়ে খুব একটা ঢাক ঢোল পেটাতে রাজি নন মালা। মালা বলছিলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে রোজই এইভাবে ট্রেনে গান গাইছি। বাড়িতে বাবা, মা, স্বামী আছে। স্বামীর সেইবভাবে রোজগার নেই। তাই বাড়িতে পড়ে থাকা অ্যাজবেস্টারের টুকড়কে ঘষে মেজে বাদ্যযন্ত্রের আকার দিয়েছি। অন্যদের বাজতে দেখতে দেখতেই বাজানো শিখেছি। মোবাইলে শুনে শুনেই গান শিখেছি। গান গেয়ে দিনে একশো, দুশো টাকা রোজগার হয়ে যায়। সকলেরই আমার গান ভালো লাগে। যাত্রীদের আনন্দ দিতে পেরে আমিও খুশি।’ কথাগুলো শেষ করেই মালা আবারও গান ধরলেন, ইট ইজ হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ লাভ’।