রান্নাবাটি
চর্বি কমাতে এক্ষুনি বানিয়ে ফেলুন এই শরবত
বেঙ্গল এক্সপ্রেসঃ আমাদের জীবন যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ততই যেন আমাদের জীবন কঠিন হচ্ছে। সারাদিন অফিসের ডেস্কে বসে কাজ করা, বাড়ি ফিরে বিভিন্ন ঘরোয়া কাজ এবং টিবি বা ল্যাপটপের সামনে বসে পড়া, পছন্দের ফাস্টফুড খাওয়া, এইসবের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরা যেন আমাদের শরীরের কথা এক্কেবারে ভুলে যাই। তা ছারাও এত কিছু করবার পর, ব্যায়াম কম করা- সব মিলিয়ে হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করা সম্ভব হয় না।
সেই সাথে প্রতিদিনের কাজের চাপ আর নানা দুশ্চিন্তার কারণে স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকে। আর স্ট্রেস হরমোন যত বাড়ে, সুগার ক্রেভিং বা শর্করার প্রতি আসক্তি তত বাড়ে। যার কারণে বেড়ে যায় শরীরের ওজন। আর বাড়তি ওজন কমাতে শুরুতে সবাই অনেক কিছু ভাবলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হয় না। তাই শুরুতেই কঠিন কিছু না করে সহজ কোনো কাজ দিয়েই না হয় ওজন কমানোর প্রথম ধাপটি শুরু হোক। আর এই ধাপটি হতে পারে কয়েকটি ঘরে বানানো ড্রিংকস বা পানীয় দিয়ে । তবে শুধু পানীয় পানেই যে ওজন কমবে তা নয়, সুস্থ থাকতে হলে এর সাথে কিছু ব্যায়ামও করতে হবে। তবে চলুন দেরি না করে হোমমেইড এই ড্রিংকসগুলো বানানোর উপায় জেনে নেই।
আরও পড়ুন- বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন রেস্টুরেন্টের মত চিকেন-কাজুবাদামের সালাদ
বাড়তি ওজন কমানোর জন্য ৩টি হোমমেইড ড্রিংকস জেমনঃ- লেবু-আদার শরবত, জিরা-দারুচিনির শরবত এবং চিয়া-লেবুর শরবত।
আদা-লেবুর শরবতঃ ওজন কমানো নিয়ে কথা বললে সবার আগে লেবুর নামটাই আসে। তবে অন্যান্য ড্রিংকের সাথে এটার পার্থক্য হচ্ছে, এতে লেবুর রস ও খোসা দুটোই ব্যবহার করা যাবে। ওজন কমাতে লেবু ও আদা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে চলুন জেনে নেই-
বাড়তি ওজন কমাতে লেবু ও আদা উপকারিতাঃ লেবুর রসে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফোলেট ও পটাশিয়াম- যা আমাদের শরীরে নানাভাবে উপকার করে। যেমন- হজমশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা রোধ করে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমায়, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, আয়রন শরীরে শোষিত হতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুর খোসায় লেবুর রসের চেয়ে ৩ গুণ বেশি ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিড আছে। ধারণা করা হয় যে, সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনির পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে। আদা আমাদের শরীরের জন্য অনেকটাই ওষুধের মতো কাজ করে। যেমন- হজমে সাহায্য করে, বমিভাব প্রতিরোধ করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে, অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি কমায় এছারাও আরও অনেক জিনিস আছে যেখানে আদা অনেক উপকারী ।
নিয়মঃ একটি লেবু কেটে এর রসটুকু চিপে বের করে নিয়ে খোসাটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। একইসাথে এক ইঞ্চি পরিমাণ আদার খোসা ছাড়িয়ে সেটাকে একটু ছেঁচে নিন বা বেটে নিন। এখন গ্যাসে বা উনুনে একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ জল নিয়ে তাতে টুকরো করা লেবুর খোসা এবং এক চা চামচ গ্রেট করা আদা দিয়ে দিন। সাথে যোগ করুন কয়েকটি গোলমরিচ এবং একটি দারুচিনি (২ ইঞ্চি সাইজের)। লেবুর খোসা গুলো নরম হয়ে আসা পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এবার গ্লাসে ঢেলে তাতে মিশিয়ে দিন মধু ও ফ্রেশ লেবুর রস। মধু যে শুধু হালকা মিষ্টি ভাব আনবে তাই না বরং এতে আছে হজমে সাহায্য করার জন্য বেশ কিছু উপাদান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানীয়টি হতে পারে আপনার ওজন কমানোর জন্য আদর্শ।
জিরা-দারুচিনির শরবতঃ জিরা শুধু একটি চমৎকার মশলাই নয় বরং ওজন কমাতেও এর আছে অসামান্য অবদান। জিরাতে আছে কিউমিন্যালডিহাইড। এই উপাদানটি সুগন্ধ ছড়ানোর সাথে সাথে আমাদের পরিপাক গ্রন্থিকে সুস্থভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। জিরাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আমাদের ত্বকে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। এছাড়া জিরা আরও যেভাবে হেল্প করে-
কোষ্ঠিকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে, অ্যানিমিয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এই পানীয়র আরেকটি উপাদান দারুচিনি। যা শুধু সুগন্ধই ছড়ায় তাই নয়, একে বলা হয় ‘পাওয়ারহাউজ অব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস’। এর গুণের জন্য হলেও প্রতিদিন একটু করে দারুচিনি আমাদের সবারই খাওয়া উচিত। দারুচিনি আরও যেভাবে হেল্প করে-রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধে এবং ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে, ফাঙ্গাল ও ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এর জুড়ি নেই।
নিয়মঃ একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ জল নিয়ে গ্যাসে বা উনুনে ফুটিয়ে নিন। এবার তাতে ৩ চা চামচ জিরা ও ২টা (২ ইঞ্চির মতো) দারুচিনি দিয়ে দিন। জল ৫-১০ মিনিটের মতো ফুটিয়ে সেই ফুতন্ত জলকে ছেঁকে গ্লাসে ঢেলে তাতে কিছুটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। ব্যস! বাড়তি ওজন কমানোর জন্য নতুন একটি ড্রিংক একদম প্রস্তুত!
চিয়া-লেবুর সরবতঃ বাড়তি ওজন কমাতে ইদানীং চিয়া সীড বা চিয়া বীজের কথা বেশ ভালোই শোনা যাচ্ছে। চিয়া বীজ ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী বলে ধরা হয়, কারণ- চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কিনা অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে খিদের প্রবণতা কমায়, যার জন্য বারবার স্ন্যাকস খাওয়ার ইচ্ছে জাগে না। তাছারাও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় স্কিনের জন্যও এটি বেশ বেনিফিসিয়াল।
নিয়মঃ প্রথমেই ২ চা চামচ চিয়া বীজ জলে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। চিয়া বীজ হালকা ফুলতে থাকলে গ্যাসে বা উনুনে জল বসিয়ে হালকা গরম করে নিন। এবার জল ও চিয়া বীজ গ্লাসে ঢেলে তাতে মিশিয়ে নিন কিছুটা লেবুর রস ও মধু। ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ওজন কমানোর জন্য এই ড্রিংকটি পান করতে পারেন।
অল্প সময়ে কীভাবে বাড়তি ওজন কমানো যায়, তা নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত নেই। অথচ আমাদের হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়েই ওজন কমানোর প্রথম ধাপটি শুরু করা যায়। প্রথম বলছি, কারণ শুধু পানীয় পানে নয়, এর সাথে খাবার কন্ট্রোল ও নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটিও করতে হবে। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।