খেলা-ধূলা
লিস্টনের হ্যাটট্রিকে ম্লান কালবৈশাখী, ৪ গোলে লন্ডভন্ড বসুন্ধরা
এটিকে মোহনবাগান- ৪ (লিস্টন-৩, উইলিয়ামস) বসুন্ধরা- ০
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : শনিবার যুবভারতী জোড়া কালবৈশাখীর সাক্ষী রইল। এএফসি কাপের গ্রুপ লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শনিবার বিকেলে মুখোমুখি হয়েছিল এটিকে মোহনবাগান এবং বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস। খেলা শুরুও হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ে। তারপরই হঠাৎ সারা যুবভারতী জুড়েই বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যুবভারতীতে তান্ডব শুরু করে দিয়েছে কালবৈশাখী। গ্যালারির ছাদের উড়ন্ত টিন, মাঠের ধারে বিজ্ঞাপনের উড়ন্ত বোর্ড- সব মিলিয়ে প্রলয়কান্ড চলছে যুবভারতীতে। থরথর করে কাঁপছে মেডিয়া বক্সের ফল্স সিলিং। ঝড়কে সমানতালে সংগত করে চলেছে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টি। নিমেষের মধ্যে প্রেসবক্সের সামনের বিশাল কাচের দেওয়াল ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে ১১ মিনিটের মাথায় খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি।
প্রায় ৫০ মিনিট বন্ধ থাকার পর বিকাল ৫টা ৩৩ নাগাদ আবারও শুরু হয় ম্যাচ। প্রাকৃতিক ঝড়ের রেশ ধরেই এবার মাঠে নতুন করে উঠল ঝড়। তবে এই ঝড় সবুজ-মেরুন। আর সেই ঝড়েই লন্ডভন্ড হয়ে গেল বসুন্ধরা। এএফসি কাপের গ্রুপ লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসকে ৪-০ গোলে হারিয়ে পরের পর্বে যাওয়ার আশা জাগিয়ে রাখল এটিকে মোহনবাগান। হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের নায়ক লিস্টন কোলাসো। বাগানের হয়ে চতুর্থ গোলটি করলেন পরিবর্ত হয়ে নামা ডেভিড উইলিয়ামস। প্রথম ম্যাচে গোকুলামের কাছে ৪-২ গোলে হারতে হয়েছিল হুয়ান ফেরান্দোর দলকে। সেখান থেকে শুধু দুরন্ত কামব্যাকই নয়, বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিল বাগান। শনিবার যুবভারতীর ঝড়-বৃষ্টি সবুজ মেরুনের পালতোলা নৌকাকে যেন বাড়তি গতি এনে দিল।
তবে ঝড়ের তান্ডব কাটিয়ে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর ম্যাচে দাপট ছিল পদ্মাপারের দলটিরই। ম্যাচের ২০ ও ২৪ মিনিটে বসুন্ধরার ফরোয়ার্ড মহম্মদ রিমন হোসেনের জোড়া শট বারে লেগে ফিরে আসে। ব্যাশ, ওই টুকুই। এরপর আর সেইভাবে ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি বসুন্ধরাকে। এরপরই যুবভারতীতে উঠল দ্বিতীয় ঝড়। ম্যাচের ২৫ মিনিটে বসুন্ধরার ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের ভুলে কাউকোর বাড়ানো বল পেয়ে যান লিস্টন কোলাসো। সেখান থেকে বল জালে পাঠিয়ে এটিকে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন তিনি। ১০ মিনিটের মধ্যে বাগানের হয়ে ২-০ করেন সেই লিস্টনই। ম্যাচের বয়স তখন ৩৪। এবারও মাঝমাঠ থেকে কাউকোর বাড়ানো বল ধরে দলের এবং নিজের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করে যান শনিবারের ম্যাচের নায়ক। এদিন প্রথমার্ধে মোহনবাগানের প্রায় সব আক্রমণই হচ্ছিল বাঁ প্রান্ত ধরে। লিস্টন কেন্দ্রীক। কাউকো-লিস্টন জুটির ঝলক সব সময় ব্যস্ত রাখছিল বসুন্ধরার ডিফেন্সকে।
যদিও প্রথমার্ধে গোলের সংখ্যা আর বাড়াতে পারেনে এটিকে এমবি। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও যদিও চিত্রটা খুব একটা বদল হয়নি। ৫৩ মিনিটে মনবীর সিংয়ের মাইনাস থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক সেরে ফেলেন লিস্টন। তখনই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। তাই ৭০ মিনিটের মাথায় কাউকোকে তুলে ডেভিড উইলিয়ামস এবং কার্ল ম্যাকহিউকে তুলে রবি বাহাদুর রানাকে নামিয়ে দেন ফেরান্দো। নেমেই বাগানের গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন উইলিয়ামস। ৭৭ মিনিটে রয় কৃষ্ণর পাশ থেকে ৪-০ করেন উইলিয়ামস। গোটা ম্যাচে এই একবারই কৃষ্ণর ঝলক দেখা গেল। তা ছাড়া বাকি সময়টা এদিন যথেষ্টই ম্লান ছিলেন বাগানের গোল মেশিন। শনিবার ফেরান্দোর ট্যাকটিক্সের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি বসুন্ধরা।
ম্যাচ শেষে এদিনের এই জয় সতীর্থ এবং পরিবারকে উৎসর্গ করেছেন কোলাসো। আর ছাত্রের এই ধারাবাহিক এবং দুরন্ত পারফরমেন্সে খুশি ফেরান্দোও। কোলাসোই ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যত তারকা হয়ে উঠতে চলেছেন বলেও জানিয়ে গেলেন বাগান কোচ। এটিকে মোহনবাগানের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার মাজিয়া এফসি-এর বিরুদ্ধে। পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত করতে হলে এই ম্যাচও জিততে হবে সবুজ-মেরুণ ব্রিগেডকে। তবে, শনিবার এটিকে মোহনবাগান যে খেলা খেলল তাতে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন সবুজ-মেরুন সর্মথকরা।