বাংলার খবর
দোষ স্বীকার করুক কেএমআরসিএল, বউবাজারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেয়র
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলাকালীন গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎই বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছান কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পরিদর্শন করার পাশাপাশি ওই বাড়ির বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং ডিজি বিল্ডিং-এর নেতৃত্বে একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে গোটা ঘটনার দ্রুত তদন্ত রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি।
শুক্রবার কর্পোরেশনে এই নিয়ে জরুরি বৈঠকেও বসেছিলেন মেয়র। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার, কেএমআরসিএল এবং সিইএসসি-এর আধিকারিকরা। ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক তাপস রায়।
এদিনের বৈঠকে কেএমআরসিএল-এর বিরুদ্ধে আবারও ক্ষোভ উগরে দেন মেয়র। এবং যত দ্রুত সম্ভব গোটা ঘটনার দায় নিয়ে কেএমআরসিএল-কে দোষ স্বীকার করতেও বলেন তিনি। এদিনের বৈঠকের পর মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কী কারণে ২ বছর ৯ মাস পর বউবাজারে আবারও বাড়িগুলোতে নতুন ফাটল ধরল, তা খতিয়ে দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কলকাতা কর্পোরেশনও আলাদা করে সমীক্ষা করবে। এ ছাড়া কেএমআরসিএল আলাদা করে একটি রিপোর্ট পুরসভাকে জমা দেবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র।
এদিনের বৈঠক শেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘অতীতেও একবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তার পরেও কেন সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি? আমি জানিনা কেন আবার এই ঘটনা ঘটল। তার জবাব আমরা তলব করেছি। কোন কোন বাড়িগুলো ভাঙতে হবে, কোন বাড়িগুলো শুধু সংস্কার করলেই হবে, তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দিলে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিছু বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। তবে ৮-৯টি বাড়ি থাকার উপযুক্ত। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ জোর করে ওখানে থেকে গিয়েছেন। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। মেট্রোর কাজ এখনও চলছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের রুজিরুটিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা কেএমআরসিএল-কেই খতিয়ে দেখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম ভাবে আমরা সহযোগিতা করব।’
এদিকে শুক্রবার মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ফাটল দিয়ে সুড়ঙ্গের ভিতর জল ঢুকছিল, সেই ফাটল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিপর্যয়ের কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শেষ হওয়ার সময় আরও কিছুটা বাড়ল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ২০২২ সালের জানুয়ারিতেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছে তারা। কলকাতা মেট্রো রেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রনাথ ঝাঁ জানিয়েছেন, ‘একটা বিপত্তি তো হয়েছেগ। স্বাভাবিকভাবেই মেট্রো প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭-৮ মাস পিছিয়ে গেল।’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমও জানিয়ে দিয়েছেন, তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করা হোক, তা তিনি চান না। এখানে অসংখ্য মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি রয়েছে। তাই সবকিছু নিশ্চিত করেই কাজ হোক বলেই জানিয়েছেন তিনি।