শুভেন্দুকে পাল্টা জবাব কৃষ্ণ কল্যাণীর! রায়গঞ্জের বিধায়কের কটাক্ষ 'মাথা হেঁট হয়নি, আমি সরে যাওয়াতে উনার মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছে
Connect with us

রাজনীতি

শুভেন্দুকে পাল্টা জবাব কৃষ্ণ কল্যাণীর! রায়গঞ্জের বিধায়কের কটাক্ষ ‘মাথা হেঁট হয়নি, আমি সরে যাওয়াতে উনার মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছে

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী ও জেলা নেতৃত্বের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে গতকালই বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক কৃষ্ণ কল্যাণী। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই দলত্যাগী রায়গঞ্জের বিধায়কের সমালোচনায় সরব হওয়ার পাশাপাশি তীব্র আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। গত ৮ জুলাই রাজ্য বাজেট অধিবেশনে কৃষ্ণ কল্যাণী নিজের বক্তব্যে কৃষকদের স্বার্থে তথা বাংলার স্বার্থে রাজ্যে সোয়াবিন চাষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এবং এই সোয়াবিন চাষের ফলে কীভাবে কৃষকরা উপকৃত হবেন, রাজ্যে শিল্পের সম্ভাবনা ও অর্থনীতি কীভাবে বাড়বে, তা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। গতকাল সেই নিয়েই কৃষ্ণ কল্যাণীকে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দাবি করেছেন, রায়গঞ্জের বিধায়ক নিজের ব্যবসার স্বার্থেই বাজেট অধিবেশনে সোয়াবিন চাষ নিয়ে কথা বলেছেন। আর তাতে নাকি বিধানসভার মধ্যেই লজ্জায় তাঁর মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল। আজ তার পাল্টা জবাব দিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। সেই বাজেট অধিবেশনে নিজের বক্তব্যে তিনি কী, কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তাতে কীভাবে রায়গঞ্জ তথা রাজ্যের মানুষ ও কৃষকরা উপকৃত হতেন তা আবারও যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। শনিবার কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘প্রথমত, সোয়াবিনজাত আমাদের কোনও পন্য বাজারে নেই। দ্বিতীয় কথা, আমি বাজেট অধিবেশনে যেটা বলেছি তার রেকর্ড কপি আমার কাছে আছে। আমি যা বলেছি হুবহু সেটা এই রেকর্ড কপির মধ্যে আছে। এখানে আমি চারটি পয়েন্ট তুলে ধরেছিলাম। একটা সোয়াবিন চাষ। এখানে সোয়াবিন চাষ সাফল্যের সঙ্গে হতে পারে, সেটা আমি ২০১৭ সালে করে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। সেখান থেকেই সরকারের থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল যে তারা সোয়াবিন চাষে আরও বেশি করে উৎসাহ যোগাবে।

সোয়াবিন এমন একটা পন্য যেখান থেকে একাধিক পন্য তৈরি হয়। ফলে এখানে সোয়াবিন চাষ হলে শিল্প আসবে। সোয়াবিন চাষ করতে যা খরচ হয়, তা ধান চাষের সমান। ধান কুইন্টাল প্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে সোয়াবিনের দাম চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তাই এখানে সোয়াবিন চাষ হলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে। দ্বিতীয় যে পয়েন্টের কথা আমি বলেছিলাম, আমাদের রায়গঞ্জ ও বারসোইয়ের মধ্যে একটা ব্রীজ তৈরি হলে সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। বারসোইয়ের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বড় বাজার নেই। একমাত্র বড় মার্কেট হলো রায়গঞ্জ। এই ব্রীজটা হয়ে গেলে সেখানকার মানুষ রায়গঞ্জে এসে কেনাকাটা করতে পারবেন। তাহলে রায়গঞ্জের অর্থনীতিও বৃদ্ধি পাবে। জেলার লোকজন রায়গঞ্জে এসে কেনাকাটি করলে রায়গঞ্জের অর্থনীতি অনেকটাই ভালো হবে বলেই আমি মনে করি। তৃতীয় যে পয়েন্ট বলেছিলাম সেটা হল, এই লকডাউনের সময় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুলো প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল।

Advertisement

কেউ আবার কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ উৎপাদন করছিল। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুবই দুর্বল হয়ে ও ভেঙে পড়েছিল। তাই আমি বলেছিলাম রাজ্য সরকারের যে জিএসটি আছে সেখান থেকে যদি কিছুটা ছাড় দেওয়া যায় তাহলে তারা খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। চতুর্থ পয়েন্ট আমি বলেছিলাম জৈব সারের ব্যাপারে। আজ করোনা অতিমারী আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। এই মহামারী আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যের প্রতি কী করে সচেতন হতে হবে। আজ যে সমস্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে, তাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যদি চাষে জৈব সার ব্যবহার করা হয় তাহলে ফসল স্বাস্থ্যকর হবে। সিকিম ইতিমধ্যেই অর্গানিক রাজ্য হয়ে গিয়েছে। সেখানে আমাদের বাজেটে দেখলাম এই খাতে মাত্র ৭০.১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই টাকাটা যাতে আরও বেশি পরিমাণে বরাদ্দ করা হয় আমি সেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম।

গতকাল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার করা কটাক্ষের জবাব আজ কটাক্ষের সুরেই দিয়েছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তিনি বলেছেন, ‘কৃষকের যদি লাভ হয় তাতে শুভেন্দুবাবুর মাথা হেঁট হয়ে যায়, বারসোইয়ের সঙ্গে রায়গঞ্জের সড়ক যোগাযোগ যদি হয় তাহলে উনার মাথা হেঁট হয়ে যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো ঘুরে দাঁড়ালে তাতেও উনার মাথা হেঁট হয়ে যায়। জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে এখানে যদি সবাই স্বাস্থ্যকর খাবার পান, সবাই যদি সুস্থ থাকেন তাহলে উনার মাথা হেঁট হয়ে যায়! আসলে উনার মাথা হেঁট হয়নি। আমি সরে যাওয়াতে উনার মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছে।

সেই জন্য আমি পরামর্শ দেব, উনার মাথা ব্যথার ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।’ গতকাল কৃষ্ণ কল্যাণী বিজেপি ছাড়ার পর তাঁকে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন শুভেন্দু। এই নিয়েও নন্দীগ্রামের বিধায়ককে পাল্টা জবাব দিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। শুভেন্দুকে নিজের ঘর সামলানোর পরামর্শ দিয়ে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘উনি আগে নিজের বাড়ির ঝামেলাটা মিটিয়ে নিন। উনার বাড়ির ঝামেলাটা তো অনেক পুরনো। আমারটা তো সবে হল। উনার বাড়িতেও তো দু’জন সাংসদ রয়েছেন। তাদের অবস্থান কোথায় আছে? সেই বাকি দু’টো কেসের ঝামেলা আগে উনি মিটিয়ে নিন। আমার কথা উনাকে চিন্তা করতে হবে না।’

Advertisement
Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.